30 C
Kolkata
June 16, 2025
Uncategorized

ভরতকে ভুলিয়ে দেবার চেষ্টা রুখে দিল সংস্কার ভারতী

মিলন খামারিয়া

কলকাতা,১৩ই ফেব্রুয়ারি।আমাদের দেশের অনেক মানুষেরই ধারণা যে, ইংরেজরা আসার আগে আমাদের দেশে নাট্যচর্চা হত না। কলকাতায় ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত ‘ওল্ড প্লে হাউস’ বা লেবেদেব প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য বেঙ্গলি থিয়েটার’ই হল ভারতের প্রথম নাট্যশালা। কিন্তু তারা এই ইতিহাস ভুলে গেছে কিম্বা কৌশলে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ভারতে প্রথম নাট্যচর্চা শুরু হয় আজ থেকে আনুমানিক ২৪০০ বছর বা তারও আগে আর নান্দনিক শিল্পের ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হ’ল নাট্যশাস্ত্রের রচনা, যা ভরতমুনি রচনা করেন। একে যোগশাস্ত্র, নাট্যবেদ বা পঞ্চমবেদও বলা হয়। এই ভারতীয় নাট্যধারার জনক ভরত মুনিই প্রাচীন ভারতীয় নাটক, বিশেষ করে সংস্কৃত মঞ্চ নাটক ও অভিনয় বিদ্যা বিষয়ক নাট্যশাস্ত্র রচনা করেন।

নাট্যশাস্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে লৌকিক আনন্দ দান এবং সনাতন ধর্মের চতুর্বর্গ অর্থাৎ ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ-এর কথা – এই শাস্ত্রের মাধ্যমে সহজভাবে প্রকাশ করা।

বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণাদি অনুসারে অনুমান করা যায় যে প্রায় ৪০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ভরতমুনি বেঁচে ছিলেন।
কথিত আছে যে, স্বয়ং ব্রহ্মা সমস্ত মানুষের বিনোদনের জন্য ঋষি ভরতমুনিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নাটকের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কিছু নিয়ম তৈরি করে তাঁর নাট্যবেদের একটি অনুলিপি উপস্থাপন করতে, যা ‘পঞ্চম বেদ’ হিসাবে বিবেচিত হয়।

মাঘ মাসের শুভ মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে ভরতমুনি জন্মগ্রহণ করেন। এই তিথি হিসেবেই হাজার হাজার বছর ধরে ভরতমুনি জয়ন্তী পালিত হয়ে আসছে ভারতে। ‘সংস্কার ভারতী’র পালনীয় দুটি উৎসবের মধ্যে অন্যতম হল ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী পালন।

গতকাল,বুধবার, সারা দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের রাজ্যেও ‘সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর ১১টি জেলার বিভিন্ন জায়গায় পালিত হয় ভরতমুনি জয়ন্তী। বিভিন্ন নাট্যদলের সাথে যৌথ উদ্যোগে পালিত হয় এই জয়ন্তী।

সংস্কার ভারতীর পূর্ব বর্ধমান জেলা ‘বর্ধমান দি পাপেটিয়ার্স’, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা ‘চাঁদপাড়া এক্টো সংস্থা’, ‘গোবরডাঙ্গা নাবিক নাট্যম’ ও ‘ঠাকুরনগর পরশ সোস্যাল এণ্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন’,
দক্ষিণ কলকাতা জেলা ‘উত্তর দক্ষিণ’ নাট্যদল, উত্তর কলকাতা জেলা ‘দক্ষিণেশ্বর সংকেত’, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা ‘বারুইপুর গঙ্গারিডি পাপেট থিয়েটার’, হাওড়া নগর ‘শিবপুর খেলাঘর নাট্যচর্চা কেন্দ্র’, বীরভূম জেলা ‘চিরন্তন থিয়েটার’ ও ‘সিউড়ি শৃঞ্জন থিয়েটার’, হুগলি জেলা ‘শ্রীরামপুর তপস্যা’, নদিয়া জেলা ‘অগ্রগামী নাট্য সংস্থা’, মেদিনীপুর জেলা ১১ টি নাট্যদলের সাথে – যৌথ উদ্যোগে ভরতমুনি জয়ন্তী পালন করেছে।

সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ-এর প্রতিটি জেলা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ভরতমুনি স্মরণ জয়ন্তী পালন করা হয় সঙ্গীত, ভরতমুনির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পুষ্পার্ঘ‍্য নিবেদন, নাটকের গান ও ভরতমুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র বিষয়ে আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে।

রাজ্যব্যাপী ভরতমুনি জয়ন্তী পালন করা প্রসঙ্গে “সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ(দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত)’-এর সাধারণ সম্পাদক তিলক সেনগুপ্ত বলেন, আজকাল মানুষ সিনেমা বা সিরিয়ালের প্রতি বিশেষভাবে আকর্ষিত হলেও ভারতীয় সংস্কৃতিতে নান্দনিকতা বা বিনোদনের জন্য অন্যতম স্থান ছিল নাটক। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব নাটক সম্পর্কে বলেছেন -‘নাটকে লোকশিক্ষে হয়’। ভারতে নাট্যচর্চা হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় ২৪০০ বছর ধরে। ইংরেজরা আমাদের দেশে আসার আগেও নাটক ভীষণ জনপ্রিয় ছিল ও শিক্ষার আধার হিসেবে বিবেচিত হত। বর্তমানে পুনরায় ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরুত্থান ও নাট্য শিল্পকে জনপ্রিয় করার জন্য ভারত সরকার এগিয়ে এসেছে। ভরতমুনি জয়ন্তী পালনের মাধ্যমে সংস্কার ভারতী সরকারের সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নাট্যশিল্পকে পুনরায় জনপ্রিয় করে তুলতে চায়।

এছাড়া এবছরই প্রথম সংস্কার ভারতীর মেদিনীপুর জেলার পক্ষ থেকে ‘ভরতমুনি সম্মান-২০২৫’ প্রদান করা হয় – নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ চিন্ময় ঘোষকে। মেদিনীপুর নগরস্থিত ১১টি নাট্যদলকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই নাট্যদল গুলি হল – মেদিনীপুর প্রয়াস, রেনেসাস ক্লাব, একলব্য নাট্য সংস্থা , নবারুণ নাট্যগোষ্ঠী, নজরগঞ্জ তরুণ সংঘ, নিছু স্মৃতি নাট্যমন্দির, নবারুণ যাত্রা সমাজ, নৃতাঙ্কুর নাট্য সংস্থা, উগ্র তারামা অপেরা, কলাভৃত অংকন নৃত্যশিক্ষা কেন্দ্র, নাট্য রূপসজ্জা।

Related posts

Leave a Comment