অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর,মুর্শিদাবাদ
শিক্ষক দিবসকে কেন্দ্র করে খাজুড়িয়া হাইস্কুলের মাঠে প্যাণ্ডেল করা হয়েছে। এলাকার সম্মানীয় মোড়ল পঞ্চায়েত প্রধান, ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে সভা।সভায় সভাপতিত্ব করছেন প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান সাহেব। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ক’রে সভা শুরু হল। গ্রামের মোড়লকে,প্রধানকে সম্মানিত করা হল পুষ্পস্তবক দিয়ে। সবাই দুচার কথা বলে ছাত্রদের মধ্য থেকে ডাক পড়লো কিছু বলার জন্য।প্রধান শিক্ষক মাইকে ডাকলেন এবার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ভ্যাবলা চরণ দাস শিক্ষক দিবস সম্পর্কে বলবে।
ভ্যাবলা- আমার নাম শ্রী ভোম্বল চরণ দাস। মাষ্টারমশাই আমাকে ভ্যাবলা ব’লে ডাকলেন। যদি মাষ্টারমশাইদের আমি এভাবে ন্যাপলাবাবু বলি , নেপাল স্যারকে তখন কেমন লাগবে আর আজকে আমার নাম বিকৃত ক’রে মাইকে রাষ্ট্র করে দিলেন! আপনারা বিকৃত মস্তিষ্কের লোক মাষ্টারমশাই। যাকগে ঝগড়া পরে হবে এখন দুচার কথা বলি ! সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ কে প্রণাম জানাই তাঁর এই জন্মদিনটি শিক্ষকদের দিবস ক’রে দেওয়ার জন্য। হ্যাঁ রোজই শিক্ষকদের দিন। সকালে উঠে একব্যাচ টিউশনি, স্কুলে গুলতানি আবার ছুটিতে আরেক ব্যাচ টিউশনি। নিজের জন্য তাঁরা জীবন বাজি রেখে আয় করছেন। আগের দিনে মাষ্টারমশাই স্কুলে যা পড়াতেন আর টিউশনি দরকার হতো না। তবে আগের দিনে ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ, মেরুদণ্ড সোজা বলে বুকলিষ্টে লেখা পেতাম।বেত বা কঞ্চি দিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে দিতেন পড়া না পারলে বা বদমাইশি করলে। বাপ্ ঠাকুর্দা তাঁরাও মাষ্টারমশাইকে উৎসাহ দিতেন তাদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে মারতে বলতেন। ছোট করে চুল ছেঁটে দিতেন নাপিতকে ব’লে! খালিপায়ে স্কুলে যেতে হতো কাঁটা ফুটতো পায়ে।
এখন দিনকাল পাল্টিয়েছে। মাষ্টারমশাই হয়েছেন টিচার, ধুতি পাঞ্জাবি না পরে প্যান্ট সার্ট পিধে স্কুলে আসছেন। আমাদের বাবা বাছাধন বলে বোর্ডকে পড়াচ্ছেন।পাছেও ভুল করে আমাদের শুয়োর গরু ভেড়া এই সব শব্দ প্রয়োগ করেন না। স্যারেরা স্কুল আসেন ঘরকে পড়িয়ে যান আর আমরাও মোবাইল পকেটে চুলে রঙ করে ,বাহার ছাঁট চুলকেটে স্কুলে আসি।কেউ কিছু বলেন না। আমরা কি কারো বাপের টাকায় খাই না পড়ি। বরং টিচারেরা সরকারের টাকায় খান ও ফুটানি মারেন। স্কুলে আসি শুধুমাত্র মিড্ ডে মিল খেতে।আর মিড নাইট মিল নেই। একবেলার খাবার খেয়েই রাতের বেলায় জল খেলেই হয়ে যায়। খেতে খেতেই ছুটির ঘণ্টা বাজে বাড়ি ফিরে আসি। সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কের মতো উপর ক্লাসে উঠি।নামবার প্রশ্ন নাই।সবাই পাশ ! না পড়েই পাশ। কতো সরলীকরণ হয়েছে পড়াশোনায়। এখন ডক্টরেট ডিগ্রি টাকা পয়সা দিয়ে পাওয়া যায়।এই মাষ্টারী টাকায় মেলে। ভালোমন্দের বিচার হয়না। তখনকার দিনে মাষ্টারমশাইদের কেউ বিয়ে দিতেন না।তারপরে এলো সরকারি বেতন , তখন বিয়ের জন্য মেয়েদের বাবার আনাগোনা। আবার পুরোনো দিন ফিরে আসছে।মাষ্টারী করলে কেউ বিয়ে দিতে আসছেন না।কারন যদি মাষ্টারী হয় দুনম্বরী তাহলে থাকবে না চাকুরী।বৌ নেবে ডিভোর্স মুখে চুনকালি দিয়ে।অথবা অনাথা বিধবা হবে !
কি যে দিনকাল এলো! নমস্কার আমার বলাবলি শেষ হলো।
previous post
next post