31 C
Kolkata
June 24, 2025
Featured

সুরদাস জয়ন্তী পালিত হল শারীরিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার শপথ নিয়ে

নিজস্ব চিত্র

অরিন্দম মুখার্জি, কলকাতা, ৫ মে: মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন গায়ক ও গীতিকার সন্ত সুরদাসজী। শতাধিক-বর্ষজীবী জন্মান্ধ এই সন্ন্যাসী ছিলেন বাঁকে-বিহারীরূপ কৃষ্ণের উপাসক এবং ‘আজন্ম দিব্যদ্রষ্টা’। তিনি ভক্তিরস-আশ্রিত ‘পুষ্টিমার্গের’ প্রচারক ছিলেন, যা ভক্তিবাদের এক নবতর, সহজসাধ্য পথ। এই পথে ভগবানের আশ্রয়ে, শ্রীকৃষ্ণের অহেতুকী কৃপায় অন্তঃকরণ সর্বদা পরিপুষ্টি লাভ করে। আশ্রিতকে সর্বদা পোষণ করেন ভগবান। অতএব, ভক্তি ও প্রেম দিয়ে তাঁর ভালোবাসা তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই প্রেমপ্রবাহ যখন জগৎ সংসারকে অবগাহন করাবে, সিঞ্চিত করবে এবং আনন্দঘন পরিবেশ রচনা করে তুলবে, তখনই ভক্তিবাদ সার্থক এবং সর্বাঙ্গ-সুন্দর হবে। সন্ত সুরদাস ভগবান-আশ্রিত এমনই এক মধুর পথের যুগপুরুষ। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই আমাদের বাঁধা হয়ে উঠতে পারে না।

‘সক্ষম’ নামক একটি রাষ্ট্রহিতৈষী সংগঠন সারা ভারতবর্ষে দিব্যাঙ্গের অধিকারী মানুষের পাশে সর্বদা রয়েছে। সমাজকে আহ্বান করে সার্বিক সক্ষমতার উন্মেষণে তারা বিশেষভাবে চিন্তাশীল ও কর্মযোগী। এই সংগঠনই সম্প্রতি কলকাতায় পালন করল ‘সুরদাস জয়ন্তী’।

গত ৪ ঠা মে, মানিকতলার ‘নরেশ ভবনে’ ‘সক্ষমে’র কলকাতা মহানগরীয় শাখা এক ভাবগম্ভীর আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছিল। সভায় সন্ত সুরদাসের মহাজীবনের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত অতিথিবর্গ। মহানগরের ‘সক্ষম’-সভাপতি ডা. শান্তনু খাঁড়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মুখ্য অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন ‘স্বস্তিকা’ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক ড. বিজয় আঢ্য। বিশেষ অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী এবং বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন ‘সক্ষম’ রাজ্য সভাপতি ড. অরবিন্দ ব্রহ্ম, ডাক্তার সনৎকুমার রায়, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গৌতম মণ্ডল এবং ড. অনিমা মণ্ডল।

অতিথির ভাষণে ড. বিজয় আঢ্য অষ্টাবক্র মুনি, সন্ত সুরদাস সহ বিদূষী হেলেন কেলারের অন্তর্দৃষ্টির কথা উত্থাপন করেন। অধ্যাপিকা মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় সক্ষমতার লক্ষ্যে সাহিত্যিক সত্যের নানান প্রসঙ্গের অবতারণা করেন; বলেন, সক্ষমতা তৈরি হয় অন্তরের আলো জ্বেলে, যারা পরিপূর্ণ জীবন ও অঙ্গ নিয়েও আলো জ্বালাতে অপারগ এবং প্রয়াসহীন, তারাই আসলে অক্ষম। অক্ষমতা থেকে সক্ষমতা এক সদর্থক পথ। এই পথেই আমাদের চলতে হবে। দৈহিক প্রতিবন্ধকতা দিয়ে সক্ষমতা মাপা যায় না। অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, সমাজে যখন বিধর্মী-সংস্কৃতি আমাদের সনাতনী বোধ ও বিবেককে ভেঙে দিতে উদ্যত হয়, অথচ পরিপূর্ণ দেহ নিয়ে আমরা সেই আগ্রাসন রোধ করতে পারি না, তখনই আমরা ‘অক্ষম’ বলে বিবেচিত হই। এই অক্ষমতা দূর করতেই হবে। সমাজের মূলস্রোতে যদি দিব্যাঙ্গের অধিকারী মানুষকে না সামিল করি, তবে সমাজিক বিকলাঙ্গতা দূর হবে না, আমাদের দায়িত্বও পালন করা হবে না।

সংগঠনের সম্পাদক অনিখ ব্যানার্জি এদিন সভায় জানান, আগামী ২২ জুন সক্ষমের প্রতিষ্ঠা দিবসে আয়োজিত হবে বিশেষ সচেতনতা মূলক কার্যক্রম। উপযুক্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধের পরিবেশনায় সেদিন প্রকাশিত হবে বিশেষ পুস্তিকা। ড. ব্রহ্ম এদিন বলেন, চারিদিকে যে অভূতপূর্ব অন্ধকার দেখা যায়, তা আসলে ভালোবাসার অভাব জনিত আঁধার। এই অন্ধকারে পথ হারিয়ে আত্মহত্যা নামক এক হতাশায় হারিয়ে যাচ্ছেন বহু মানুষ। সমাজকে সক্ষম করে তোলা মানে, এই অন্ধকার দূর করাও বোঝাবে। ড. সনৎকুমার রায় বলেন, সুরদাস জয়ন্তী থেকে শুরু করে সক্ষমের প্রতিষ্ঠা দিবসের মাঝে প্রতিবছর সম্পন্ন হয় ‘সক্ষম-মিত্র যোজনা’। দিব্যাঙ্গজনের সাহায্যার্থে আর্থিক দায়বদ্ধতা গ্রহণের শপথ এবং রাশি সমর্পণ। তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে এই যোজনায় অংশগ্রহণ করতে বিশেষ অনুরোধ করেন। সক্ষম, কলকাতা মহানগরীর সহ-সভাপতি কল্যাণ চ্যাটার্জির পরিবেশিত ভক্তিমার্গীয় সঙ্গীত এদিন সভার সৌকর্য বৃদ্ধি করে। এদিন সভার শেষ মিষ্টিমুখ করানো হয় সকল দর্শক ও শ্রোতাকে।

Related posts

Leave a Comment