28 C
Kolkata
June 15, 2025
সাহিত্য

পলাশ – বড়ন্তি

দীননাথ চক্রবর্তী

ভ্রমণের কি কোন হোলি থাকে? অবশ্যই থাকে। অবশ্য আমাকে বলায়। বড়ন্তি যত না লেকের,পাহাড়ের,তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি দোলের। পলাশ দোলের । সে দোল ভিতর এবং বাহিরের রং এর দোল। শরীর যেমন রাঙে, মন ও তেমনি রাঙে। সে দোল চলে পুরো মাস ধরে। পরিবারের সকলেই মেতে ওঠে। কোন বাধাতেই নেই কোন খামতি।

বহতা স্রোতের যেমন খামতি থাকে না। এ দোল পূর্ণিমা আকাশে চাঁদের পূর্ণিমা দিয়ে শুরু হলেও, মনের আকাশে সে দোল পলাশ পূর্ণিমা। পলাশকে বাদ দিয়ে বড়ন্তি সম্পূর্ণ নয়। তাইতো আলাদা করে বড়ন্তির পলাশ গ্রামের নাম হয় ভিটা। তার মোহনা সৌন্দর্য স্বর্গোদ্যান বললেও অত্যুক্তি হয়না। যেন রংমহলের তান বাহার। মার্চ-এপ্রিলের দগ্ধ তাপ প্রবাহ ও হয়ে যায় নতজানু। টোটো চালকের কথায়, পাথরের টিলা হওয়ায়,পাথর গরম হয়ে যায় তাড়াতাড়ি। রোদ পড়ে গেলে শীতল ও হয় তাড়াতাড়ি। মনোরম থাকে সকাল বিকাল। সেই সাথে বাতাসের সঙ্গতে বড়ন্তি হয়ে ওঠে অনন্য। সকাল বিকালের পলাশ -বড়ন্তি এক কথায় অপরূপা।আর দুপুরের জন্য হোটেল লজ এসি তো রয়েছেই যথেষ্ট পরিমাণে।প্রকৃতির রঙের উৎসবকে ছুঁতে হলে অবশ্যই পলাশ -বড়ন্তীর কাছে আসতেই হবে। আদিবাসী দোলের গান ও নৃত্য চোখ কান খোলা রাখলেই অনুভবে আসবে।

ছোট্ট একটা গ্রাম। যেন প্রকৃতি ললনা। পঁচিশটা পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে। লালচে আভার ধুলোর রাস্তাটা উঠে গেছে বাঁধের ওপর। তারপর কালো পিচের রাস্তা।সুবিশাল হ্রদ পেরিয়ে ডানদিকে বাঁক নিয়েছে। পাশেই ছোট্ট টিলাকে সঙ্গী করে মুরাডি হ্রদ।প্রাণ জুড়িয়ে যায়। রোদ জলে চিকচিকে তরঙ্গ। বাতাসের খুনসুটি। পানকৌড়ির ধ্যান মগ্নতা। প্রচুর পাখি আর প্রজাপতির আনাগোনা। ড্যামের পাড়ে কোল ঘেঁষে জলে শিল্পীর তুলির অমোঘ টান। সে রং মুহূর্তে চুরি করে চোখ মন। সে রং অনন্য। ডিজাইনার কিংবা কর্পোরেট অ্যালবামে জায়গা করে নেয়। স্থানীয় ভাষায় সে রঙের উৎস দগ। অর্থাৎ পচা কচুরিপানা।

গ্রামের মাঝ বরাবর ক্যানেলের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা নেমে গেছে সেটা চলে গেছে মানপুর গ্রামে। সকালে যদি পথ ধরে হাঁটা যায়,দেখা যাবে পলাশের রং ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিকানো মাটির ঘরের দেয়ালের পাশে শান্ত গৃহপালিত ছাগলের দল। গরু বাঁধা

কানে আসে কূজন গীতির সাথে মোরগ- মুরগির ডাক।নাকে এসে ধরা দেয় গোবর নেদার গন্ধ। সাথে সাথে মহুয়ার মাদকতা।
ছোট্ট এই গ্রামটি পুরুলিয়া জেলার সানতুরি ব্লকে। সাব ডিভিশন রঘুনাথপুর। পি এস সানতুরি। পাশেই আদিবাসী গ্রাম রামজীবনপুর। পলাশ গ্রাম ভিটা। একদিকে বিহারীনাথ পাহাড়। কাছেই গড় পঞ্চকোট। রামডাঙ্গায় ছিন্নমস্তা মন্দির। অন্যদিকে পাঞ্চেত ড্যাম।

কোথাও যদি যেতে না চান তাহলে নদীর পাড়ে বসুন। রেঙে উঠুন পলাশ ফুলে আগুন মাখা সূর্যাস্তে। লালচে আবিরে কে যেন রাঙিয়ে দেয় পাহাড়ি কন্যার চুল। সূর্যাস্তের ঝর্ণা ধারা গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে আসে পাহাড়ের গা বেয়ে। আর যদি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে চান অবশ্যই সকালে বেরিয়ে পড়ুন। রাস্তার অভাব নেই। নানা রকম পথ পেয়ে যাবেন। সে পথের নাম জীবিকা পথ। আদিবাসী জীবিকা পথ। ভাববেন না, একবার ওঠা শুরু করলেই কোথা থেকে দেখবেন,গোটা চারেক কুকুর এসে যাবে। যারা আপনাকে পথ দেখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে যাবে। উচ্ছিষ্টের জন্য নয়। যেন যুধিষ্ঠিরের স্বর্গের পথ দেখানো কুকুর। বড়ন্তি তে থাকার জায়গার অভাব নেই। আছে আকাশমণি,পলাশ কুইন, লেকহিল রিসোর্ট, পলাশবাড়ী, বড়ন্তি ভিলেজ রিসোর্ট, বড়ন্তি ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড নেচার স্টাডি হাট। ঘর বুক করে নিলেই ভালো হয়।

কীভাবে যাবেন?কোলকাতা থেকে মোট দূরত্ব 250 কিমি। হাওড়া থেকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ধরে আদ্রা জংশন।তারপর আদ্রা থেকে লোকালে চলে যান মুরাডি। কয়েকটি স্টেশন মাত্র। আধ ঘণ্টার পথ । মুরাডি থেকে 6 কিমি। টোটো ধরে পৌঁছে যান বড়ন্তি। এছাড়াও হাওড়া থেকে আসানসোল ট্রেনে। তারপর আদ্রা প্যাসেঞ্জার ধরে মুরাডি। সপ্তাহান্তে প্রকৃতির মাঝে ছুটি কাটাবার আদর্শ গ্রাম বড়ন্তি।

Related posts

Leave a Comment