সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: ফের গোটা দুনিয়া জুড়ে করোনার দাপট। ক্রমশ বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চীন ও আমেরিকায়। এই দুই দেশে দ্রুত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে নতুন করে জারি হয়েছে কোভিড নিষেধাজ্ঞা। ভারতেও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। যদিও ভারতে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। তবুও আগাম সতর্ক থাকতে চায় কেন্দ্র সরকার।
এরকম পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলি তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে, কোনও কোভিড বিধিনিষেধ না মেনে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটিয়ে চলেছে কংগ্রেস। তারা অহেতুক মোদী সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে ভারত জোড়ো যাত্রার নামে দেশজুড়ে মচ্ছব শুরু করে দিয়েছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে পদযাত্রায় কোনও কোভিড নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কংগ্রেস নেতা কর্মীরা। ভিড় করে দলীয় কর্মীরা কোনও দূরত্ব বজায় না রেখে এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করে চলেছেন। এতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
কারণ, কংগ্রেস যেভাবে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে দ্রুত দেশজুড়ে পুনরায় করোনার বিস্তার ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যে এই ভারত জোড়ো যাত্রায় কোভিড বিধি লঙ্ঘন নিয়ে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। তিনি কংগ্রেসকে বার্তা দিয়েছেন, হয় কোভিড বিধি মেনে চলুন, না হলে ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করুন। কিন্তু, কে শোনে কার কথা? উল্টে কংগ্রেস নেতারা কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা দোষারোপ চাপানোর খেলায় মেতেছে। তাঁদের অনেকে দাবি করছেন, বিজেপি কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করতে চাইছে।
যদিও কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রক একবারও বলেনি কোভিড বিধি মেনে চললেও কংগ্রেসের ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সেই অভিযোগ করে বসে আছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রীর এই অবিবেচনাসুলভ মন্তব্য নিয়ে বিস্মিত হয়েছে দেশের রাজনৈতিক মহল। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, অশোক গেহলট একটি দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কিভাবে এই দায়িত্বজ্ঞাহীন মন্তব্য করতে পারেন? তিনি তাহলে নিজের রাজ্যে কোভিড বিধি লাগু নিয়ে কতটা তত্পর হবেন?
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ও রাজস্থানের মু্খ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য চিঠি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক করেন। সেই চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ভারত জোড়ো যাত্রায় কোভিড বিধি মেনে চলুন। এবং শুধুমাত্র তাঁরাই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে পারবে, যাঁরা ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়েছেন। ব্যবহার করতে হবে মাস্ক ও স্যানিটাইজার। মানতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি। কিন্তু, কোভিড বিধি যদি মেনে চলতে না পারেন, তাহলে ভারত জোড়ো যাত্রা কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে দিন। কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এই উপদেশ মানা তো দূরের কথা, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই চিঠিকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট একপ্রকার হুমকি হিসাবে দেখছেন।
উল্লেখ্য, এমনিতে দেশজুড়ে কংগ্রেসের ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে দেশের সিংহভাগ মানুষ। এজন্য রাহুল গান্ধী একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েছেন দলকে চাঙ্গা করার জন্য। কিন্তু বারবার তাঁর সেই কর্মসূচি ফ্লপ হয়েছে। তিনি একাধিক লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলে গেছেন। কিন্তু, তাঁর সেই রাজনৈতিক টনিক দেশের সচেতন মানুষ কেউই গ্রহণ করেননি। কার্যত প্রতিবারই দেখা গেছে, ভোটের পর তাঁর দল কোমায় চলে গিয়েছে। ২০১৭-এর গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের সময় একই কান্ড করেছিলেন কংগ্রেসের যুবরাজ। কিন্তু, সেই রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে জোট গড়ে কংগ্রেস কয়েকটি আসন বেশি পেয়েছিল মাত্র। বিজেপির ভোটব্যাংকে ধস নামাতে পারেনি। উল্টে গেরুয়া শিবিরের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার বেড়ে গিয়েছিল। একই অবস্থা হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, আসাম সহ অন্যন্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও। পর পর দুটি লোকসভা নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের ।
ফের তিনি সেই মরা গাঙে জোয়ার আনতে ভারত জোড়ো যাত্রার শুরু করেছেন। তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা ১০০ দিন পার করলেও সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাহুল গান্ধী নিজেই কোভিড বিধি মেনে চলছেন না। তিনি দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে, হাতে হাত ধরে মিছিলে সামিল হয়েছেন। এমনও দেখা গেছে, তিনি মিছিলের অগ্রভাগে আছেন। তাঁর হাত ধরে দুই পাশে দুইজন মহিলা যুব কর্মী পা মিলিয়ে চলেছেন কোনও দূরত্ববিধি না মেনে। মুখে মাস্কও পরেননি তাঁরা কেউই। কন্যাকুমারিকা থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন এটি রয়েছে হরিয়ানাতে।
অন্যদিকে, মোদী সরকারের তৎপরতায় দেশ থেকে করোনা মহামারী অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব হলেও, শাসকদল বিজেপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোভিড বিধিকে উপেক্ষা করেনি। সম্প্রতি অমিত শাহ কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দপ্তরে ১৪ জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করলেও কোভিড বিধি মেনে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছিলেন। এমনকি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি রেখেছেন কোভিড বিধি মেনেই। তিনি দলের কর্মীদের জমায়েত বা ভিড়কে প্রাধান্য দেননি।
previous post