27 C
Kolkata
April 12, 2025
রাজ্য

হিরণের গাড়ি ঘিরে তৃণমূলপন্থীদের দফায় দফায় বিক্ষোভ

সংবাদ কলকাতা, ২৫ মে: ৬ষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচনে দেশের অন্যান্য রাজ্যে বড় কোনও অশান্তির খবর পাওয়া না গেলেও পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটে দুর্ঘটনাও। জানা গিয়েছে, সোনামুখীর পাতরা জঙ্গলে নির্বাচন কমিশনের একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনায় জখম হন গাড়ির চালক। তাঁকে চিকিৎসার জন্য সোনামুখী ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ও অভিনেতা হিরণের গাড়ি ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণের বিরুদ্ধে ভোট প্রক্রিয়া বানচাল ও গ্রামবাসীদের মারধর করার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করেন তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। তাঁরা হিরণের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, গতকাল রাতে কেশপুরের একাধিক গ্রামে হিরণের নেতৃত্বে হামলা চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বহু গ্রামবাসীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। অনেকের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। মারের চোটে অনেকের মাথা ফেটে গিয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে হিরণের গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলপন্থীরা।

অভিযোগ, গতকাল রাতে ওই এলাকায় কিছু এলাকাবাসী চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখনই পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পরে ওই গ্রামে ঢোকে ১০ থেকে ১২ জন দুষ্কৃতী। সাধারণ মানুষ প্রথমে দেখে ভেবেছিল পুলিস কর্মী ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা গ্রামবাসীদের মারধর করতে শুরু করে বলে অভিযোগ। চায়ের দোকানে যাঁরা আড্ডা দিচ্ছিলেন তাঁদেরও মারধর কর হয় বলে অভিযোগ তৃণমূলপন্থীদের। সেই ঘটনায় পাঁচ থেকে ছ’জন জখম হন। পরিস্থিতি দেখে গ্রামবাসীরা আনন্দপুর থানায় খবর দেন। কিন্তু থানার তরফে জানানো হয় ওই এলাকায় কোনও পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়নি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পরে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা সকলেই দুষ্কৃতী। গোটা ঘটনার জন্য ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণকেই দায়ী করেছে তৃণমূলপন্থীরা। কারণ তাঁরা হামলা চালানোর আগে এলাকায় ঘুরে যান বিজেপি প্রার্থী। সেই ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শনিবার ওই গ্রামে যেতেই তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন হিরণ। মহিলা সহ গ্রামবাসীদের পথ অবরোধ শুরু হয়।

বিজেপি জানায়, কেন্দ্রীয় বাহিনী তার কাজে ব্যস্ত ছিল। তাদের রুটিন কাজ করে যাচ্ছিল, যার তথ্য থানার কাছে কেন নেই জানি না। তবে ভুয়ো কেন্দ্রীয় বাহিনী বলে গুজব রটানো সম্পূর্ণভাবে তৃণমূলের চক্রান্ত। আসলে তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে অশান্তি পাকানোর জন্য এই নাটক সাজিয়েছে।

একই পরিস্থিতি কেশপুরের বিভিন্ন গ্রামে। দফায় দফায় তৃণমূলপন্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। যার মধ্যে কেশপুরের মুগবাসান গ্রামে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ওই গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময়ে হিরণের গাড়িকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, ১০০ দিনের কাজ আর আবাসের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। সেই বকেয়া টাকা মেটানোর দাবিতে হিরণের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। হাতে লাঠি-বাঁশ নিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন তাঁরা। এমনকী গাছের গুঁড়ি ফেলে দিয়ে রাস্তা বন্ধ করেও দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিস। তবে বিজেপি-র অভিযোগ, ভোটে বিপর্যয় বুঝতে পেরে গ্রামবাসীদের ইন্ধন যোগাচ্ছে তৃণমূল। এভাবে ভোটের দিনে ১০০ দিনের কাজের টাকার দোহায় দিয়ে মানুষের সমর্থন কুড়াতে চাইছে।

ওদিকে হলদিয়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের গান্ধীনগর কলোনিতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি নেতা বাবুলাল মণ্ডল। বর্তমানে তিনি হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিপরীত ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার বাকচায়। এখানকার ১৩টি বুথে তৃণমূলের পোলিং এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগের আঙ্গুল বিজেপি-র দিকে। অভিযোগ, বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা বেশ কয়েকটি জায়গায় ভোটারদের বাধা দিচ্ছে।

খড়্গপুরে চাঞ্চল্যকর ঘটনা! ভোট দিতে গিয়ে ভোটার জানলেন তাঁর মৃত্যু হয়েছে! সেজন্য ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে তাঁর। এদিন যথারীতি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের খড়্গপুর সদর বিধানসভার ২৬০ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন ৭৭ বছরের এক বৃদ্ধা। ওই বৃদ্ধার নাম লক্ষ্মী পাত্র। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লক্ষ্মী দেবী প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানান। তিনি তাঁর ভোটার কার্ডও দেখান। কিন্তু কোনও আধিকারিকই তাঁর সমস্যার সমাধান করতে না পারায় ভোট না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে লক্ষ্মী দেবীকে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের সাবড়াতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। দুই রাজনৈতিক দলের ৬ জন কর্মী জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জখমদের ভর্তি করা হয়েছে খন্ডরুই গ্রামীণ হাসপাতালে। ভাঙচুর করা হয়েছে দু’পক্ষের ক্যাম্প অফিস। ঘটনাস্থলে রয়েছে উত্তেজনা। খবর পেয়েই পৌঁছেছে বিশাল পুলিস বাহিনী।

Related posts

Leave a Comment