November 1, 2025
রাজ্য

প্রাচীন দ্রব্যের নামে নকল সোনা বিক্রি, পূর্ব মেদিনীপুরে বড় প্রতারণা চক্রের হদিশ, গ্রেপ্তার ১

সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: পূর্ব মেদিনীপুরে প্রাচীন দ্রব্য কারবারের নামে একটি বড়সড় প্রতারণা চক্রের হদিশ মিলল। ঘটনায় আজারুদ্দিন শা নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে রামনগর থানার পুলিশ। গতকাল বুধবার তাকে আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় কাঁথি আদালত। প্রতারিত এক ক্রেতার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় রামনগর থানা। এই চক্রে অনেক মহিলাও যুক্ত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চক্রের মূল পান্ডার খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।

কাঁথি আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রতারণা চক্র মেদিনীপুর ও কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে সক্রিয়। তারা প্রাচীন সোনার মূর্তি ও মুদ্রা বিক্রির নামে নকল ধাতব দ্রব্য বিক্রি করে। যাঁদের এই সমস্ত প্রাচীন দ্রব্য সংগ্রহের শখ আছে, তাঁদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে সোনার জিনিসের বদলে সোনার জল করা পিতল বা অন্যান্য ধাতব দ্রব্য বিক্রি করত। কিন্তু, এতদিন এই বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখায়নি। যার ফলে এই চক্র দিনের পর দিন প্রতারণার কারবার চালিয়ে গিয়েছে।

সম্প্রতি কলকাতার হরষিত মিশ্রা নামে এক যুবক আইনজীবী সৈকত সিকদারের পরামর্শ মতো রামনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বছর ২৬ বয়সী ওই যুবকের অভিযোগ, তাঁকে একটি প্রাচীন সোনার গণেশ বিক্রির প্রস্তাব দেয় ছাত্তার নামে এই প্রতারণা চক্রের এক পান্ডা। সেটি ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিনতে রাজি হয়ে যান হরষিত। সেই মতো তিনি প্রথমে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা অগ্রিম দেন। পরে আরও ২ হাজার টাকা যাতায়াত খরচ প্রদান করেন।

কিন্তু, নির্দিষ্ট সময়ে তাঁকে মূর্তিটি পৌঁছে দিতে টালবাহানা করতে থাকে চক্রটি। অবশেষে হরষিত নিজে রামনগরে ওই চক্রের ডেরাতে গিয়ে মূর্তিটি নিয়ে আসেন। সেই সময় তিনি চুক্তি মতো বাকি তিন লক্ষ ৪০ হাজার টাকা মিটিয়ে দেন। কিন্তু, বাড়ি ফিরে স্বর্ণ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেটি যাঁচাই করতেই মাথায় বাজে পড়ে তাঁর। বুঝতে পারেন, তিনি বড়সড় প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মূর্তিটি আদৌ সোনার নয়। সেটি আসলে পিতলের উপর সোনার জল করা মাত্র।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রামনগর থানা ওড়িশা রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এক সময় এখানে বিভিন্ন প্রাচীন জিনিসের কারবার চলত। সেটা প্রায় একশো বছর আগেকার কথা। কিন্তু, সেই ইতিহাসকে ভাঙিয়ে একটি বড় চক্র প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তাঁরা ক্রেতাকে গল্প দিত, এই মূর্তিটি একটি প্রাচীন বাড়ি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে। অথবা কোনও পুকুর খনন করার সময় উদ্ধার হয়েছে। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হত, সহজেই মানুষ তাদের কথায় বিশ্বাস করে প্রতারণার ফাঁদে পা দিত। পুলিশ বিষয়টি জানলেও এতদিন কেউই এই বিষয়ে অভিযোগ করেনি। ফলে তাঁরা কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

হরষিতই প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রতারিত হওয়ার পর অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে রামনগর থানা। যদিও দুষ্কৃতীরা বেশ কিছুদিন এলাকায় না থাকায় নাগালে পায়নি পুলিশ। অবশেষে নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে আজহারুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে রামনগর থানা। বাকিদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, এই প্রতারণা কাণ্ডে ৯৫ হাজার টাকা ভাগ পেয়েছে সে। অন্যরা বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পুলিশ মূল অভিযুক্ত ছাত্তারের খোঁজ চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

Related posts

Leave a Comment