নিজস্ব সংবাদদাতা, বসিরহাট: সন্দেশখালির ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য। চাপের মুখে পড়ে বিতর্কিত তৃণমূল নেতা উত্তম সরদার ও শিবু হাজরার বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করল পুলিশ। সন্দেশখালির এক নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেওয়ার পর পুলিশ এই স্বতঃস্ফূর্ত পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি সন্দেশখালির মহিলাদের একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। তোলপাড় হয়েছে দেশ। বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সন্দেশখালির মহিলারা অভিযোগ করেন, মহিলাদের স্বামীর সামনে জোর করে পাড়া বা গ্রামের ক্লাবে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সারারাত থাকতে বাধ্য করা হয়। প্রকাশ্যে মহিলাদের এই বয়ানের পর রাজ্যের উচ্চ আদালত স্বতঃস্ফূর্ত মামলা গ্রহণ করে। সরব হয় নারী সংগঠনগুলিও। জাতীয় মহিলা কমিশনও এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এরপর আজ, শনিবার পুলিশের এই পদক্ষেপে অগ্নিগর্ভ সন্দেশখালিতে কিছুটা হলেও স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশনে দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে গিয়ে শাহজাহান অনুগামীদের হাতে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিকরা। গ্রামবাসীদের সংগঠিত জনরোষের মুখে পড়ার পর একের পর এক রাজনৈতিক বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে থাকে। শেখ শাহজাহান ও সন্দেশখালি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই উঠে আসে নতুন নতুন অভিযোগ। অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য শেখ শাহজাহানের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। সেই তালিকায় নাম উঠে আসে জেলা পরিষদের সদস্য ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি উত্তম সরদার ও তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার বিরুদ্ধে।
ইতিমধ্যে শিবু হাজরা ও উত্তম সরদারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সন্দেশখালির বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। হামলা চালানো হয় শিবু ও উত্তমের বাসস্থানে। গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে উত্তম সরদারের বাড়িতে ভাঙচুর করে সন্দেশখালির বাসিন্দারা। এর পরদিন শিবু হাজরার পোল্ট্রি ফার্ম ও বাগান বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। অভিযোগ করা হয়, তৃণমূলের মিটিংয়ের নাম করে রাতের দিকে শিবু হাজরার বাগান বাড়িতে মহিলাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে গভীর রাতে অন্য মহিলাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও সুশ্রী মহিলাদের বসিয়ে রাখা হতো। এরপর উন্মত্ত তৃণমূল নেতারা ওই মহিলাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাতো বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালি। শিবু ও উত্তমের গ্রেপ্তারের দাবি জোরালো হতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ১৪৪ জারি করে। এই বিক্ষোভের মুখে পুলিশ উত্তম সরদারকে গ্রেপ্তার করলেও শিবু হাজরা এখনও বেপাত্তা। অথচ হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ, সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সরদারকে।
এদিকে আজ সন্দেশখালিতে উত্তম ও শিবুর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা রুজু হওয়ার মধ্যেই আরও এক খবর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে। বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি সুমিত কুমারকে বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি করা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়কে। কয়েকদিন আগেই ভাস্করবাবুকে মালদা রেঞ্জের ডিআইজি পদে বদলি করা হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠেছে, সন্দেশখালির মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার জন্যই বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি-কে বদলি করা হয়েছে। যদিও এব্যাপারে নবান্নের পক্ষ থেকে সেই জল্পনায় জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে। নবান্ন জানিয়েছে, এটা রুটিন বদলি।