সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: শিবসেনার নিয়ন্ত্রণ হারাল ঠাকরে পরিবার। ঘটল পরিবারতন্ত্রের অবসান। নির্বাচনের কমিশনের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে দলের রাশ গেল একনাথ শিন্ডের শিবিরে। শিন্ডের নেতৃত্বে শিবসেনার বিদ্রোহী অংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায়, এবার থেকে ‘শিবসেনা’ নাম ও দলের ‘তীর ধনুক’ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে শিন্ডে শিবির।
নির্বাচন কমিশন সাফ জানিয়েছে, শিবসেনা দলের নাম ও প্রতীক এতদিন যে অংশের হাতে ছিল, দলের সেই কমিটি অগণতান্ত্রিক উপায়ে গঠিত। এই কমিটির পদাধিকারীদের কোনও নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয়নি। তাঁরা সংরক্ষণের ভিত্তিতে দলে স্থান পেয়েছেন। কমিশনের বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির সম্পর্কে ভারতীয় সংবিধান বলে, যে কোনও রাজনৈতিক দলেই পদাধিকারীদের নির্বাচনের মাধ্যমে বেছে নেওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়াটি হয়তো কঠিন, কিন্তু দলের সমর্থকদের সমর্থনের কথা মাথায় রেখে এই প্রক্রিয়াই যে কোনও রাজনৈতিক দলে কার্যকর হওয়া উচিত।’’
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার পর শিন্ডে শিবিরের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি আমরাই আসল শিবসেনা। আমাদের দিকে দলীয় সমর্থকদের সমর্থন বেশি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পর আমাদের কাছে আরও মানুষ আসবেন। কারণ আমাদের কাছে এখন নাম এবং প্রতীক দুই-ই আছে।’’
প্রসঙ্গত শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের প্রয়াণের পর দলের ভিতরে দীর্ঘদিন ধরে একটা চাপা অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। বিশেষত ঠাকরে পরিবার দীর্ঘদিন ধরে দলে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে আসছিল। উদ্ধব ঠাকরে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যের বাইরে দলের অন্য নেতাদের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের স্বাধীন মতামত দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকারও ছিল না। যাঁরা দলে ঠাকরে পরিবারের অনুগামী ছিলেন একমাত্র তাঁরাই দলে ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন।
এর ফলে দলের সিংহ ভাগ বিধায়ক বিদ্রোহ শুরু করে। গত বছর জুন মাসে উদ্ধব সরকারের বিরোধিতা করে সরকার থেকে বেরিয়ে আসেন সিংহভাগ বিধায়ক। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় উদ্ধব ঠাকরেকে। এদিকে একনাথ শিন্ডে বিদ্রোহী বিধায়কদের নিয়ে বিজেপির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেন। এবং শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হন।
সরকার গঠনের পর শিবসেনা দলের দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। দলের সিংহভাগ বিধায়ক যাঁদের সমর্থনে সরকার গঠন হয়েছে, তাঁরা দলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে। এরফলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে উদ্ধব শিবির। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী দলের রাশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতৃত্বের হাতেই থাকার কথা। আর এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র নির্বাচন কমিশন। কিন্তু উদ্ধব ঠাকরে ক্ষমতা ধরে রাখার অভিপ্রায়ে নির্বাচন কমিশনের স্মরণাপন্ন না হয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ উদ্ধবের আবেদন খারিজ করে দেয়। দেশের শীর্ষ আদালত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দেয়।
গত ৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন ‘শিবসেনা’ নাম ও তার ‘তীর ধনুক’ প্রতীক ব্যবহার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। পরিবর্তে শিন্ডে শিবিরের নাম হয় ‘বালাসাহেবঞ্চি শিবসেনা’। আর দেওয়া হয় ‘ঢাল-তরোয়াল’ প্রতীক। অন্যদিকে উদ্ধব শিবিরের নাম হয় ‘শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে)’। দেওয়া হয় ‘মশাল’ প্রতীক। অবশেষে শুক্রবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাল নির্বাচন কমিশন। পরিবারতন্ত্র নয়, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে তুলে দিল সাংগঠনিক ক্ষমতা। এরফলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন যুগের সূচনা হল। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সমর্থক ও নেতা-কর্মীরা পেল এক অনাবিল মুক্তির আস্বাদ।
previous post