শঙ্কর মণ্ডল: প্রত্যাশা মতোই উত্তরপূর্ব ভারতের তিন রাজ্যে বিজেপির জোট জয়লাভ করল। বরাবরই ত্রিপুরা বাদে বাকি উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে কেন্দ্রের শাসক দলের প্রতি স্থানীয় পার্টিগুলোর সমর্থন থাকে। তবে গণতন্ত্রে জয় এবং পরাজয় দুটোই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্ত পেশি শক্তির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল নিজের দিকে আনার চেষ্টা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। যদিও পুরোপুরি পেশি শক্তির ওপর নির্ভর করেই নির্বাচনে সার্বিক সফলতা পাওয়া যায় বলে আমি মনে করি না।
যাই হোক, আজ আমি এই রাজ্যের সাগরদীঘির উপনির্বাচন নিয়ে একটু বেশি আলোকপাত করতে চাই। যদিও একটা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ওপর পুরো রাজ্যের মানুষের মেজাজ বোঝা যায় না। কিন্ত এটা বলাই যায়, এই রাজ্যের একটা বড় অংশ বর্তমান তৃণমূলকে ‘না’ বলে দিতে চাইছে। কারণ, তৃণমূলের এই লাগামহীন ঔদ্ধত্য এবং সার্বিক দুর্নীতি মানুষ কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না। কিন্ত যেভাবে বিরোধী দল হিসাবে কেউই উপযুক্ত নয়, তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই তৃণমূলকে পরিবর্তন করতে পারছে না। কারণ আদর্শগতভাবে এই রাজ্যের মানুষ কোনও দিনই কমিউনিস্ট হতে পারে না। কেবলমাত্র কংগ্রেস বিরোধিতার কারণেই তারা বাম নামাঙ্কিত কমিউনিস্টদের পক্ষে দীর্ঘদিন সমর্থন করে এসেছে।
আর একটা বিষয় হল মেরুকরণীয় ভোটে এই রাজ্যে বহুকাল ধরেই তৃতীয় শক্তির কোনও ভোট থাকে না। কারণ, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, তৃতীয় দল ভোটে জিততে পারবে না। ঠিক এই কারণেই দীর্ঘদিন অত্যন্ত প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়ে চলা বিজেপি কোনও আসনে জিততে পারত না। হ্যাঁ, ওই প্রশিক্ষিত কর্মীরা সংখ্যায় হয়ত কম ছিল। কিন্তু আজ যখন বিজেপিকে মানুষ প্রধান প্রতিপক্ষ বলে মনে করতে শুরু করল, ঠিক তখনই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই প্রশিক্ষিত কর্মীদের ব্রাত্য করে একদল ধান্দাবাজ অপ্রশিক্ষিত দলবদলুদের দিয়ে রাজনীতি করতে শুরু করল। ২০২১- এর পর এই সংখ্যা বিশেষ করে বুথ স্তরে একেবারেই শূন্য হয়ে গেছে। কোনও প্রশিক্ষণ নেই এমন ব্যক্তিদের পদে বসিয়ে দেওয়া হল।
এখন দেখা যাচ্ছে, সকলেই মানে একজন ব্যক্তিও পদ ছাড়া রাজনীতি করতে চান না। এমন ব্যক্তিরাই এখন দলের সম্পদ। যাঁরা স্লোগান পর্যন্ত দিতে পারে না। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই সামান্য একটা থানায় ভুল ডেপুটেশন লিখে কর্মসূচি নিতে গিয়ে হঠাৎ করে রাস্তা অবরোধ করে ফেলে। আর সেখানে সর্বসাকুল্যে ২০ জন লোক। তাও বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে। যা ওই নেতৃত্ব ও কর্মসূচির ইনম্যাচিওরিটি প্রমাণ করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে, পুরনো কর্মীরা জিততে পারে না, এই অজুহাতে তাদের কাজে না লাগানো সম্পূর্ণ মূর্খামী। কিন্তু এইভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ অন্য কাউকে বিরোধী দল হিসাবে ভোট দিয়ে তৃণমূলকে হারাতে চাইবে। সাগরদীঘির উপনির্বাচনের মাধ্যমে সেই ইঙ্গিতই উঠে আসছে। আর এই কারণেই এটা অত্যন্ত অশনি সংকেত। বিশেষ করে আদর্শগত কারণে। আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য কমিউনিস্টদের উত্থান অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
previous post
next post