অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
হ্যাগা – তুমি চাকুরী যখন পেয়েছো তোমার বয়স কতো ছিলো। চাকুরীর বয়সসীমা কতো থেকে কতো? আমারও তো অনেক বয়স হয়ে যাচ্ছে পেনশন কবে পাবো? পেনশনের কি বয়সসীমা লাগে না। বিয়ের আগে তোমার বাবা আমার বাবাকে বলতো- সুন্দরীর বয়স চলে যাচ্ছে বিয়ে দিন আমার ছেলের সঙ্গে। বাবা বিয়ে দিলেন কিন্তু বয়স তো কমছে না সেই বেড়েই চলেছে!
এই কথাগুলো সুন্দরী তার স্বামী ভোম্বলকে জিজ্ঞেস করছে।
ভোম্বল – আমি তোমার ব্যবস্থা করেই যাবো। মরলে পরেই তুমি পেনশন পাবে। তোমার অভাব হবে না।
সুন্দরী – তাহলে তুমি কবে মরবে গো বলো? আমার যদি সব অভাব পূরণ হয় তাহলে তোমার থেকে লাভ কি? তাকে সময় থাকতে আসতে দাও। তুমি মরবেও না আর আমার পেনশন হবেও না। হয়তো আমিই দিন গুনতে গুনতে ভবসংসার ছেড়ে পাড়ি দেবো। কতো লোকের ভাতার মরে। তারা কতো সুখী। আর তোমার মরণ হয়না? যমের কি অরুচি তুমি? প্রতিদিন সন্ধ্যায় তুলসী তলায়,চান করে শিবের মাথায় বেলপাতা দিয়ে মানত করি,হে ভগবান আমারটা তুলে নাও। বোবা কালা ঠাকুর আমার কথার কোনো গুরুত্বই দেয়না। শিবের জায়গা আস্তাকুড়ে, যেখানে কুকুরে প্রস্রাব করে সেখানে। ভক্তির ভগবান জানতাম। কিন্তু এ শিবে হবে না। যমের পূজা করাই শ্রেষ্ঠ। ও খুঁজে পায়না মানুষ! আমি তাঁকে ঠিক দেখিয়ে দেবো। দেখি মাস পহেলা বিধবারা নতুন নতুন শাড়ি পরে ব্যাঙ্কে লাইন দেয়। হাতে টাকা পেতে কতো জন তাদেরকে সাহায্য করে চেকবইয়ে লিখে দেয়। বিধবারা শুধু টিপ ছাপ দিয়ে টাকা নিয়ে মিষ্টি খেয়ে প্রসাধনী সামগ্রী কিনে বাড়ি আসে। জীবনে কোনদিন সাবান তেল লিপস্টিক পায়নি তারা আজ সব পাচ্ছে। ভাতার থাকার চেয়ে না থাকায় অনেক গুণ ভালো। যাদের ভাতারের চাকুরী ছিলো না, তারা সব বিধবা ভাতার জন্য দরখাস্ত করে পাচ্ছে। আর কতো কাল সইবো এসব দুঃখ যন্ত্রনা।
ভোম্বল – সবুরে মেওয়া ফলে। আমি যতোদিন বাঁচবো ততো পেনশন বাড়বে আর মরলে পরে তখন তুমি অর্ধেক বাড়তি টাকা পাবে। সে আমি মরলে তুমি কি করবে না করবে সেটাতো দেখতে আসবো না। তখন তুমি স্বাধীন–একাই একশো। তবে দেখছি আমার যতো বন্ধু মারা গেছে,সবার বৌয়ের শরীরে মাংস লেগেছে। কি সুন্দর সব তাদের চেহারা।
সুন্দরী – তাহলে তুমিই বলো, তাদের যদি নীরোগ মোটাসোটা শরীর হয় সেই ব্যবস্থা আমার হওয়া উচিত। তুমি খুব স্বার্থপর! সারাদিন পরিশ্রম করেও শূণ্য । তুমি ছয় ঘন্টা কাজ করে তোমার ফুটানি। শনিবার রবিবার বিশ্রাম। তার উপরে গরমের ছুটি,বর্ষার ছুটি,পূজোয় ছুটি? আমার জীবনে ছুটি ছাঁটা নাই। উলু দিয়ে এনেছো আর হরিবোলে মনে হয় ছাড়বে? পোড়া কপাল আমার। অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়। সেদিন তোমার বন্ধু সাগরের বৌ সিল্কের শাড়ি কুঁচিয়ে, চুলে শ্যাম্পু করে ফেনিয়ে আমাদের পথের পুকুরে পা ধুয়ে জুতো পরছে। কে একজন মোটরসাইকেলে পুকুরপাড়ে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দিলো। আমি তাড়াতাড়ি গেলাম কিন্তু ও মুখ ফিরিয়ে নিলো! কি দেমাক্ মাগীর এখন ওর? দাঁড়া তোকেও দেখাবো আমারটা মরুক তারপর। হয়তো বয়সে একটু ভাটা পড়বে। তা পড়ুক! এখন নানারকম ফেসওয়াশ বেড়িয়েছে। ক্রীম, মুখ পালিশ, ঠোঁট পালিশ,নখ পালিশ সব পালিশে চিক্কন হবে মুখের আবরণ। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবো। শাঁখা সিঁদুর বেমানান। শাঁখা সিঁদুর না পরে একখানি গলার হার,কানে ঝুমকো পাশা , হাতে সোনার চুড়ি পড়লে ঠিক ছুঁড়ি ছুঁড়ি লাগবে। বয়স বাড়লেও অসময়ে বয়স কমে আসে অনেকখানি কথাটি সত্য। হা ভগবান! তোমার কি চোখ নাই? আমাকে উদ্ধার করো! আমারটাকে নামা ওঠা করাও। হে মা গঙ্গা! তোমার বুকে আমার টাকে স্থান দিয়ে আমাকে ত্বরাও মা। খেতে দিয়ে, শুতে দিয়ে বিড়বিড় করে বলি – নামুন্যা মা গঙ্গায় যা! তবুও যাইনা। এবার ভাবতে হবে আমাকে! নিজের কাজ নিজেই করতে হয়। ওই কাঁটা আমি সরাবার ব্যবস্থা করবোই করবো। হাতে না পারি ভাতে মারবো।
previous post