29 C
Kolkata
August 3, 2025
রাজ্য

পার্থর অপরাধের জন্য দায়ী মমতাই: নজরুল ইসলাম

সংবাদ কলকাতা: পার্থর দুর্নীতির জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দায় তাঁকে নিতে হবে। পার্থ পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি করেছেন, অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন না, এমনটা হতে পারে না। চাকরি বিক্রি করেছে মালিক। ফড়েরা সামান্য কমিশন পেয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল-এর বিতর্ক সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে এমনভাবে আক্রমণ করলেন প্রাক্তন আইএএস অফিসার নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফড়েরা বাজারে দর হেঁকেছেন। তাঁরা খরিদ্দার জোগাড় করে চাকরির দামটা, আর দাতার নামটা মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। মালিক চাকরি বিক্রি করেছেন। অর্থাৎ যিনি সরকার চালান। তিনিই চাকরি বিক্রি করেছেন। ফড়েরা বিক্রি করেননি।

নজরুল সাহেব এবিষয়ে সেই উলঙ্গ রাজার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ছুঁড়ে দেন একগুচ্ছ তীব্র প্রশ্নবাণ। তিনি বলেন, মেরুদন্ডহীন, লজ্জাহীন, ফন্দিবাজ লোকেরা রাজার গায়ে যে কাপড় নেই, সেই কাপড়ের প্রশংসা করছেন। কিন্তু যাঁদের মেরুদন্ডটা এখনও বিক্রি হয়নি, তাঁরা তো বলছেন, “রাজা তোর কাপড় কোথায়? কাপড়ের কোনও আড়াল নাই!” পার্থ চট্টোপাধ্যায় দোষী। কিন্তু, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে দলের দু’নম্বর নেতা ছিলেন, সেই দলের এক নম্বর নেত্রী কে ছিলেন? পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সেই মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন? এবিষয়ে তিনি সংবিধানের ১৬৪ ধারার ২ উপধারার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, মন্ত্রিসভার দায়িত্ব যৌথ। অর্থাৎ তিনি ইঙ্গিত দেন, কেউ একজন অপরাধ করলে বাকিরা জবাবদিহি থেকে বাদ পড়তে পারেন না। সেজন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে অপরাধ করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দায় এড়াতে পারেন না।

এপ্রসঙ্গে নিদর্শনস্বরূপ তিনি একটি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। অতীতে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, পার্থ কোনও অপরাধ করে থাকলে তার জন্য আমরা সকলে দায়ী। নজরুল সাহেব উদাহরণ হিসেবে সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন।

নজরুল ইসলাম মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এরাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী কে? স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই তো এরাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী। যেখানে সাধারণ ইউনিফর্ম পরা পুলিশের পাশাপাশি আইবি, এসবি এরকম গুপ্ত বার্তা বিভাগের পুলিশরা থাকেন।

তিনি বলেন, আইবি-তে একজন ডিজি বা এডিজির অধীনে একাধিক পদস্থ আধিকারিক থাকেন। সেখানে একাধিক আইজি, ডিআইজি, এসএসপি, ডিএসপি, ইন্সপেক্টর, সাব ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল সহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর বহু পুলিশ থাকেন। ঠিক তেমনি এসবি-তে ডিসি, এসি, ইন্সপেক্টর, কনস্টবল সহ অনেক পুলিশ আছে। রাজ্যের প্রত্যেকটি থানায় আইবি-র লোক আছে। কলকাতা পুলিশের ক্ষেত্রে এসবি-র লোক আছে। এইসব বিশেষ পুলিশ কর্মীরা এলাকার খবরাখবর জোগাড় করে উপরের পদস্থ আধিকারিকদের কাছে পাঠান। অতএব পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা যে সব অপরাধ করেছেন, সেসব তো পুলিশ মন্ত্রীকে অবশ্যই জানিয়েছেন। তাহলে তিনি ব্যবস্থা নেননি কেন? যদি বলেন জানাননি, তবে পুলিশ বিভাগে এত শয়ে শয়ে লোক জনগণের টাকায় পোষা হচ্ছে কেন? তার উত্তরটা তো পুলিশ মন্ত্রীকেই দিতে হবে।

এরপর নজরুল সাহেব রাজ্যের দুর্নীতি দমনে ভিজিল্যান্স কমিশনের গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আমাদের রাজ্যে একটা ভিজিল্যান্স কমিশন আছে। যার একমাত্র কাজ দুর্নীতি দূর করা। অন্য কোনও কাজ নেই। সেই ভিজিল্যান্স কমিশনে চিফ সেক্রেটারি পদমর্যাদার তিনজন কমিশনার আছেন। আইএস সেক্রেটারির অধীনে একটা সেক্রেটারিয়েট আছে। আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে এন্টি করাপশন-এর ব্যুরো-তে পুলিশের লোকেরা আছেন। বিভাগীয় তদন্তের জন্য কমিশনাররা আছেন। হিসাব এবং কারিগরির এক্সপার্টরা আছেন। প্রতিটা জেলায় এই ভিজিল্যান্স কমিশনারের ব্রাঞ্চ আছে। ডিএম পদাধিকার বলে ডিস্ট্রিক্ট-এ ভিজিল্যান্স অফিসার। এবং তাঁর অধীনে পুলিশের লোকেরা আছে। প্রতিটি বিভাগে ভিজিল্যান্স অফিসার আছে।”

তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এই যে ভিজিল্যান্স-এর শয়ে শয়ে লোক, পার্থ চ্যাটার্জী ও মানিক ভট্টাচার্যরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দুর্নীতি করেছেন, তখন কি এঁরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন? যদি ঘুমিয়েই থাকেন, তাহলে জনগণের টাকা দিয়ে তাদের পোষা হচ্ছে কেন? এই ভিজিল্যান্স কমিশন কর্মীবর্গ বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর এই কর্মীবর্গ বিভাগেরও মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তাহলে সেই কৈফিয়ত তো মমতা ব্যানার্জীকেই দিতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের এরাজ্যে স্বচ্ছতার জন্য একটা ইনফরমেশন কমিশন আছে। যদি কেউ কোনও খবর না দেয়, তাহলে ইনফরমেশন কমিশন তাকে সাজা দিতে পারে। কিন্তু বাসুদেব ব্যানার্জী, জিএমপি রেড্ডির মতো যে আধিকারিকরা এই অপরাধে অপরাধী, তাঁদেরকে এই কমিশনে নিয়ে এসে সেই ইনফরমেশন কমিশনটাকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। যার জন্য মানিক ভট্টাচার্যকে ইনফরমেশন না দেওয়ার জন্য সাজা হাইকোর্ট-কে দিতে হচ্ছে। ইনফরমেশন কমিশন কাজ করছে না।

তিনি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বলেন, আমাদের রাজ্যে একটি মানবাধিকার কমিশন আছে। সেই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদে হাইকোর্ট-এর একজন বিচারকের থাকার কথা। এছাড়া হাইকোর্ট অথবা জেলা জজের একজন মেম্বার থাকার কথা। কিন্তু, এখন এই কমিশন চালাচ্ছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার। যিনি চাকরিতে থাকাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, অন্ততঃ আমি এটা প্রমাণ করতে পারব।

নজরুল ইসলাম বলেন, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। কিন্তু, রাজ্য মানবাধিকার অকেজো হয়ে আছে। এপ্রসঙ্গে তিনি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীনেশ গুপ্তের মন্তব্য তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, দীনেশ গুপ্ত একসময় বলেছিলেন, রাজ্য সরকার এই মানবাধিকার কমিশনকে কাজ করতে দেয় না। তদন্ত করার জন্য অফিসারও রাখে না। তাহলে এই মানবাধিকার কমিশন অকেজো করে রাখার দায় তো মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে।

প্রাক্তন দুদে আইএএস অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে রাজ্যে মমতার অনুপ্রেরণা ছাড়া একটা বাথরুমও উদ্বোধন হয় না। সেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘাঁড়ে কি বারোটা মাথা ছিল, যে তিনি এতগুলো যোগ্যপ্রার্থীকে বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকা আদায় করেও অযোগ্য বা কম যোগ্য লোকদের কাছে চাকরি বিক্রি করেছেন? এটা কখনও হতে পারে না।

সবশেষে নিয়োগ দুর্নীতিতে যে মমতা ব্যানার্জী জড়িত, তার একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “একটা চিঠি এসেছিল মমতা ব্যানার্জীর কাছে। এই লোক এত টাকা আদায় করে চাকরি বিক্রি করছে। তিনি যদি জড়িত না থাকতেন, তাহলে তদন্ত করাতেন। সেই লোকদের ধরতেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্ট-কে আদেশ দিতে হতো না।” তিনি আরও দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা সেই চিঠিটা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। তার অর্থটা কী? মুখ্যমন্ত্রী কি মানিককে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, কোনও প্রমাণ থাকলে লোপাট করো। না হলে ধরা পড়ে যেতে পারে।

Related posts

Leave a Comment