সংবাদ কলকাতা: তৃণমূলের চমকদারি প্রার্থী তালিকায় একদিকে যেমন চাপে বিজেপি, তেমনি দলের অন্দরে বাড়ছে ক্ষোভের আগুন। কিন্তু, কেন এই ক্ষোভ, সেই ব্যাখ্যার আগে একবার ৪২ লোকসভার আসনের তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় চোখ বুলিয়ে নেব।
কলকাতা (উত্তর) – সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা (দক্ষিণ) – মালা রায়
ডায়মন্ড হারবার – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
যাদবপুর – সায়নী ঘোষ
হাওড়া – প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
দমদম – সৌগত রায়
বারাসাত – ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার
ব্যারাকপুর – পার্থ ভৌমিক
কৃষ্ণনগর – মহুয়া মৈত্র
বহরমপুর – ইউসুফ পাঠান
শ্রীরামপুর – কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
হুগলি – রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
তমলুক – দেবাংশু ভট্টাচার্য
ঘাটাল – দীপক অধিকারী (দেব)
বসিরহাট – হাজি নুরুল ইসলাম
জয়নগর – প্রতিমা মণ্ডল
মথুরাপুর – বাপি হালদার
উলুবেড়িয়া – সাজদা আহমেদ
আরামবাগ – মিতালি বাগ
বিষ্ণুপুর – সুজাতা মণ্ডল খাঁ
বর্ধমান পূর্ব – শর্মিলা সরকার
বর্ধমান দুর্গাপুর – কীর্তি আজাদ
আসানসোল – শত্রুঘ্ন সিনহা
বোলপুর – অসিত মাল
বীরভূম – শতাব্দী রায়
কোচবিহার – জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া
আলিপুরদুয়ার – প্রকাশচিক বরাইক
জলপাইগুড়ি – নির্মলচন্দ্র রায়
দার্জিলিং – গোপাল লামা
রায়গঞ্জ – কৃষ্ণ কল্যানী
বালুরঘাট – বিপ্লব মিত্র
মালদা (উত্তর) – প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
মালদা (দক্ষিণ) – শাহনাওয়াজ আলি রেহমান
জঙ্গিপুর – খলিলুর রহমান
মুর্শিদাবাদ – আবু তাহের খান
রানাঘাট – মুকুটমণি অধিকারী
বনগাঁ -বিশ্বজিৎ দাস
কাঁথি – উত্তম বারিক
ঝাড়গ্রাম – কালীপদ সোরেন
মেদিনীপুর – জুন মালিয়া
পুরুলিয়া – শান্তিরাম মাহাতো
বাঁকুড়া – অরূপ চক্রবর্তী
রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশে তৃণমূলের রাম্প শো ছাড়া আর কিছুই গ্রহণযোগ্য ছিল না দলের নেতা, কর্মীদের কাছে। অনেকেই মনে মনে হতাশ হয়ে পড়েন অভিষেকের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা দেখে। বিশেষ করে দলের প্রথম দিনের সঙ্গী ও বর্ষীয়ান নেতারা এই প্রার্থী তালিকায় স্থান পাননি। পরিবর্তে ভূইঁফোড় এমন কিছু ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হয়েছে, যাঁদের দলে কোনও ভূমিকায় নেই। একমাত্র বনগাঁর জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস ছাড়া আর কোনও সাংগঠনিক নেতাকে প্রার্থী করা হয়নি। যদিও বিশ্বজিৎ দাস দলবদলু নেতা বলে পরিচিত। বিজেপি-তে গিয়ে বিধায়ক হওয়ার পর বছর দুই আগে তিনি বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। প্রার্থীদের অনেকেই বহিরাগত। তাঁদের প্রার্থী করায় ক্ষেপেছে দলের জেলা স্তরের নেতা কর্মীরা। এমনটাই দলীয় সূত্রের খবর। এদিকে রানাঘাটে বহিরাগত প্রার্থী মুকুমণি অধিকারীর ওপর ভরসা নেই দলের নেতা কর্মীদের। তিনি যে ফের গেরুয়া শিবিরে ভিড়ে যাবেন না, সেব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই।
এছাড়া সাংগঠনিক নেতারা এই প্রার্থী তালিকায় স্থান পায়নি। যা নিয়ে দলের অন্দরে তুষের আগুনের মতো ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। অনেকের মধ্যে দলত্যাগের মানসিক তৈরি হয়েছে। যেকোনও মুহূর্তে বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা সদলবলে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করতে পারে। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা ব্রিগেডেই দেখা যায়। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে দলের স্লোগান দেওয়ার সময় সভায় উপস্থিত নেতা কর্মীদের কণ্ঠস্বর ম্লান হয়ে আসে। বাধ্য হয়ে নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, গলার স্বর এতো আস্তে কেন?
এদিন সভার শুরুতে অভিষেককে এমনভাবে দেখানো হয়, তিনি যেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কোনও তারকা। যাঁর খ্যাতি বিশ্বজোড়া! রাম্পে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন, আর কিছু জুনিয়র নেতা কর্মী হাততালি দিলেও সিনিয়ররা সেইভাবে সাড়া দেননি। কারণ, দলের বর্ষীয়ান নেতারা হাঁটুর বয়সী অভিষেককে এইভাবে স্বাগত জানাতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। দলের যোগ্য নেতাদের সম্মান না দিয়ে অভিষেককে মহাপুরুষ দেখানোর চেষ্টার মধ্যে গান্ধী পরিবারের মতো সেই পরিবারতন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়। দলের হাই কম্যান্ড ক্রমশ নিচু স্তরের নেতা কর্মীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত প্রত্যাশা মতোই রবিবার ব্রিগেডের সমাবেশ থেকেই রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে তৃণমূল। মঞ্চে মমতার নির্দেশ মতো এই তালিকা ঘোষণা ও প্রার্থীদের পরিচিতি দেন দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী তালিকায় রাখা হয় একাধিক চমক। বিভিন্ন বিধানসভার বিধায়কদের যেমন লোকসভায় প্রার্থী করা হয়েছে, ঠিক তেমনি এবারও সিনেমা ও ক্রীড়া জগতের নতুন মুখও নিয়ে আসা হয়েছে নতুন প্রার্থী হিসেবে।
বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন, রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, জুন মালিয়া, বিপ্লব মিত্র, বিশ্বজিৎ দাস, নির্মলচন্দ্র রায়, বিজেপি থেকে নবাগত বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী সহ একাধিক মুখ।
এছাড়া বর্ষীয়ান ও একাধিকবার নির্বাচনে জয়ী সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মালা রায়, শতাব্দী রায়দের মতো অভিজ্ঞ সাংসদদের তাঁদের নিজের নিজের কেন্দ্রে ফের প্রার্থী করা হয়েছে। এছাড়া তৃণমূলের নবীন সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, প্রতিমা মণ্ডল, অভিনেতা দেব -এর মতো ব্যক্তিত্বরা।
নবাগতদের মধ্যে চমকপ্রদ প্রার্থীও রয়েছেন। হুগলি থেকে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও দিদি নাম্বার ১ খ্যাত রচনা ব্যানার্জিকে। বহরমপুর থেকে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করা হয়েছে। তমলুক কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে দেবাংশু ভট্টাচার্যকে। যেখানে সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিজেপি প্রার্থী করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। এমনকি তাঁর নামে দেওয়াল লিখনও শুরু করেছে বিজেপি।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হল, বিষ্ণুপুরে বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁরই প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা খাঁকে। যা নজিরবিহীন ঘটনা। রাজনীতিতে এই ধরণের চমক দেওয়া একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেই সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে প্রাক্তন আইপিএস প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এছাড়া রয়েছেন কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা, পদ্মশ্রী কালিপদ সোরেনের নামও প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে।
তবে এবারের প্রার্থী তালিকায় নেই দুই তারকা প্রার্থী নুসরত জাহান ও মিমি চক্রবর্তী। নুসরতের জায়গায় বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে এখানকার প্রাক্তন সাংসদ হাজি নুরুলকে। আর মিমির জায়গায় যাদবপুরে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের যুবনেত্রী ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে।
এছাড়া এবার ব্যারাকপুরে প্রার্থী করা হয়নি অর্জুন সিং-কে। এই নিয়ে অর্জুনপন্থী নেতা কর্মীরা ব্যাপক ক্ষোভ দেখিয়েছেন। অর্জুনের গড়ে অর্জুনকে প্রার্থী না করে পার্থ ভৌমিককে প্রার্থী করায় বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই আসন উদ্ধার নিয়ে রাজনৈতিক মহল যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছে। কারণ অর্জুন জোড়াফুলে যোগ দিলেও এই কেন্দ্রটি মূলত এখন বিজেপির কেন্দ্র।
next post
