সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: বাংলাদেশের নায়ক জায়েদের প্রেমে মজেছেন এপার বাংলার নায়িকা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়! এমনই গসিপ ছড়িয়েছে সংবাদ মাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সম্প্রতি তিনি ‘ছায়াবাজ’ ছবিতে জায়েদের বিপরীতে অভিনয় করতে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। সেখানে শুটিংয়ে গিয়ে ঘটে হুলুস্থূল কাণ্ড! প্রথমেই গানের দৃশ্য নিয়ে শ্যুটিং শুরু হয়। সেই সময় ছবির নৃত্য পরিচালকের সঙ্গে সায়ন্তিকার তুমুল ঝগড়া বাধে। বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। ঝগড়া শেষ পর্যন্ত প্রযোজক পর্যন্ত গড়ায়।
সূত্রের খবর, সায়ন্তিকাকে গানের দৃশ্যের মহড়া দেওয়ার সময় ডান্স ডিরেক্টর নাকি তাঁর নরম হাত ছোঁওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি। তিনি সায়ন্তিকার হাত ধরে নাচের দৃশ্য বোঝাতেই চটে লাল হয়ে যান টলিউড অভিনেত্রী। রেগে গিয়ে তাঁকে দু-চার কথা শুনিয়ে দেন। এরপর সিনেমার প্রযোজককেও এক হাত নেন। তাঁর অভিযোগ, আগে থেকে কোনও পরিকল্পনা না করেই সিনেমার শ্যুটিং শুরু করেছেন তাঁরা। চূড়ান্ত অব্যবস্থা! টেকনিক্যাল সমস্যার কোনও সুরাহা তাঁরা করতে পারেননি। এসব নানারকম দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন প্রযোজক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। গত ৩০ আগস্ট কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন সায়ন্তিকা ব্যানার্জি। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘ছায়াবাজ’ ছবির শুটিং করার কথা। কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ফিরেছেন অভিনেত্রী। কলকাতায় ফিরে প্রযোজক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণের অভিযোগ এনেছেন।
প্রযোজকও সায়ন্তিকা ও নায়ক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানারকম অভিযোগ করেছেন। প্রযোজক মনিরুল ইসলামের অভিযোগ, অপেশাদারি আচরণ আমি নই, সায়ন্তিকাই করেছেন। চুক্তির বাইরে আমরা তাঁকে ৫০ হাজার রুপি দিয়েছি পোশাকের জন্য। অথচ তিনি কোনও পোশাক নিয়ে আসেননি। এরপর আবার ড্রেসম্যান মনিরকে দিয়ে পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেই পোশাকগুলোও সায়ন্তিকা ফেরত দিয়ে যাননি।’
প্রযোজক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সায়ন্তিকার সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হাস্যকর। হাত ধরা নিয়ে সায়ন্তিকার সমস্যা নৃত্য পরিচালক মাইকেল বাবুর সঙ্গে। তিনি পরিচালককে ফোন করে মাইকেল বাবুকে মারতেও চেয়েছিলেন। এখন আমার বিরুদ্ধে সায়ন্তিকা কেন অভিযোগ করছেন, সেটাই তো বোধগম্য নয়। আমার সঙ্গে তাঁর সমস্যা হলে মাইকেলকে কেন বসিয়ে রাখবেন? একজন তারকা যদি নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে না পারেন, তাহলে আর কী বলার আছে।’
শুটিংয়ে অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মনিরুল বলেন, ‘কিভাবে শুটিং হবে, এটা ঠিক করেন পরিচালক। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল গানের দৃশ্য দিয়ে শুটিং শুরু হবে। সেই সঙ্গে শুটিং শেষ করার পরও নায়ক-নায়িকার হোটেলে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মনিরুল ইসলাম বলেন, নায়ক-নায়িকা ড্রেস চেঞ্জ করার নাম করে দুপুর ২টোর সময় একসঙ্গে হোটেলে যান। ফেরেন সন্ধ্যে ৬টার সময়। প্রায় চার ঘন্টা পরে শ্যুটিংয়ের সেটে ফিরে আসেন তাঁরা। প্রযোজকের প্রশ্ন, এতো সময় তাঁরা হোটেলে কী করছিলেন? ড্রেস চেঞ্জ করতে তো চার ঘন্টা সময় লাগতে পারেনা!
প্রযোজকের এই তথ্য থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে রসালো প্রেমের গুঞ্জন। শুধু তাই নয়, সায়ন্তিকাও জায়েদের সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সায়ন্তিকা তাঁকে সুপারস্টার বলছেন। এমনকি তাঁর প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন বারবার। এমনটাই দাবি সেদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যমের। সায়ন্তিকার কথায়, ‘জায়েদ খান এত সুন্দর, এত লম্বা, এত ফর্সা! সত্যিই, তাঁকে দেখলেই আমার কেমন যেন লাগে। উফ…!’ ফলে আগুনে ঘি পড়ার মতো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, সর্বত্র!
তাছাড়া জায়েদ-সায়ন্তিকা জুটি আগামীতে ‘টাইগার’ নামে বাংলাদেশের আরও একটি সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। কিছুদিন পর সেটির শুটিংও শুরু হবে। ফলে ফের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে তাঁর। অনেকে মন্তব্য করেছেন, সায়ন্তিকা জায়েদের প্রতি পুরো ফিদা হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা একে ওপরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন! ফলে আগামীতে দুজন গাঁটছড়া বাঁধাও অসম্ভব নয়।
যদিও নায়ক জায়েদ খান এটাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, সায়ন্তিকা তাঁর অনেক ভালো বন্ধু। তাঁদের মধ্যে শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক! সায়ন্তিকার ভাষায়, ‘ও তো বাংলাদেশের সুপারস্টার। মেয়েরা তাঁর চারপাশে মাছির মতো ঘুরবে এটা তো স্বাভাবিক! এটাই হওয়া উচিত। নইলে আর কিসের স্টারডম!’
এদিকে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জায়েদ মোটেই বাংলাদেশের সুপারস্টার নন। তাঁর ক্যারিয়ারে নেই কোনও উল্লেখযোগ্য ছবি। তিনি হাতে গোনা যে কটি ছবি করেছেন, সেগুলোর প্রায় সব ব্যবসায়িকভাবে অসফল। তবুও সায়ন্তিকা তাঁকে এতো প্রশংসা করছেন, মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিচ্ছেন কেন? সত্যিই কি তাঁরা প্রেমে মজেছেন! নাকি এটি একটি ব্যবসায়িক কৌশল! অনেকে ধারণা করছেন, ওপর বাংলায় জায়েদ-সায়ন্তিকা জুটির সিনেমা হিট করাতেই এই গসিপ দর্শকদের মনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাঁদের নিয়ে মানুষের মনে নানারকম কৌতূহল সৃষ্টি হয়। এবং ছবি মুক্তি পাওয়ার পর কাতারে কাতারে দর্শকরা হলমুখী হন।
previous post
next post