30 C
Kolkata
August 3, 2025
জেলা

এক অনন্য সম্প্রীতির নজির মালদহের চাঁচল রাজবাড়ির দুর্গাপূজায়

মালদা, ১২ অক্টোবর: প্রায় তিনশো বছরের পুরনো মালদার চাঁচলের রাজবাড়ি। এখন রাজাও নেই। রাজত্বও নেই। বর্তমানে রাজবাড়ির একটি অংশে তৈরি হয়েছে মহকুমা আদালত। অপর একটি অংশে চলছে কলেজ। তবে একাংশে এখনও রয়েছে পাকা দালানের চন্ডীমন্ডপ। সময়ের তালে তাল মিলিয়ে রাজবাড়ির গৌরব হয়েছে স্তিমিত। কিন্তু ঐতিহ্যের গরিমায় আজও উজ্জ্বল তিনশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই রাজবাড়ির পুজো। পাশাপাশি দেখা যায় সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন।

দুর্গা ষষ্ঠীর ১২ দিন আগে কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির পুজো। টানা ১৭ দিন ধরে এই পুজো হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রত্যেকটা বনেদি পুজোর মতোই এই পুজোরও নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য ও কাহিনী আছে।

জানা যায়, সতেরো শতকের শেষভাগে উত্তর মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্ব ছিল। ধর্মপ্রাণ প্রজাদরদী রাজা হিসেবে যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল তাঁর। কথিত আছে, একবার রাজা দেবী চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহানন্দার ঘাটে স্নান করার সময় তাঁর হাতে চতুর্ভুজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি উঠে আসে। দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো। প্রতি বছর মহাসমারোহে রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে পুজোর জন্য নির্মিত হয় পাকা মন্দির। আজও প্রাচীন প্রথা মেনে সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গা দালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে। দশমীতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান। দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে চলে পুজো।

এখন রাজাও নেই, রাজ্যপাটও নেই, রাজবাড়ির পুজো পরিচালনা করে ট্রাস্টি বোর্ড। তবুও রাজার সেই প্রাচীন রীতি মেনে আজও মালদহের রাজবাড়ির দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। প্রতিদিন পুজোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় চলে চন্ডীপাঠের আসর। যা দশমীর সন্ধ্যায় দেবী বিসর্জন পর্যন্ত চলতে থাকে। সেই রীতি আজও মেনে চলা হয়।

দেবী এখানে চতুর্ভূজা সিংহবাহিনী। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, চন্ডীমণ্ডপের দেবীর জন্যই তারা সুরক্ষিত। সেই আবেগ ও বিশ্বাসে ভর করেই ভক্তি-নিষ্ঠা ও ঐতিহ্যের ওই পুজোয় একবারের জন্য হলেও হাজির হন স্থানীয়রা। রীতি মেনে অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোও হয়। ওই দিন গোটা চাঁচলই হাজির হয় চন্ডীমণ্ডপে।

সেই আদিকাল থেকেই আজও দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের সময় সেখানকার অর্থাত্‍ মহানন্দার নদীর ওপারের বৈরগাছি এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ লণ্ঠন নিয়ে পথ দেখান মাকে। সেই রীতি এখনও প্রচলিত।

Related posts

Leave a Comment