লোকসভার বাজেট অধিবেশনে আমেথিতে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের প্রায় ১০৫ একর জমি কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করলেন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি
সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: মঙ্গলবার লোকসভায় বাজেট অধিবেশনের সময় রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন স্মৃতি ইরানি। নথি সহ তুলে ধরলেন আমেথিতে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের একাধিক জমি কেলেঙ্কারির কথা। এদিন লোকসভায় ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে দেশের গরিব মানুষ প্রসঙ্গে তাঁর উপলব্ধির কথা তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী। তিনি দাবি করেন, তাঁর নেতৃত্বে ভারত জোড়ো যাত্রার সময় দেশের বহু গরিব ও বেকার মানুষ তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা তাঁকে শোনান। বর্তমান সরকার দেশের গরিব ও বেকারদের জন্য কার্যত কিছুই করেনি। আর এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বিশেষভাবে সরব হন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রীমতী স্মৃতি ইরানি ও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
স্মৃতি ইরানি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন, কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের মুখে গরিব মানুষের কথা মানায় না। এটা রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এপ্রসঙ্গে তিনি তাঁর লোকসভা কেন্দ্র আমেথিতে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের দুটি বড়ো জমি কেলেঙ্কারির কথা নথি সহ তুলে ধরে সংসদে তোলপাড় ফেলে দেন। বিজেপি নেত্রী এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি রাহুল গান্ধীকে এদিন তীব্র কটাক্ষ করেন এবং আমেঠিতে একটি জমি কেলেঙ্কারির জন্য কংগ্রেস দলকে অভিযুক্ত করেন।
তিনি সংসদে বেশ কিছু নথি বের করে বলেন, ১৯৮১ সালে আমেথিতে একটি ফাউন্ডেশন ৪০ একর জমি নিয়েছিল। সেসময় তারা সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আমরা এই ৪০ একর জমি নিয়ে আমেথির গরিব মানুষের জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করব। এই ৪০ একর জমি মাত্র ৬২৩ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে সরকারের কাছ থেকে নিয়েছিল ওই ফাউন্ডেশন। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে সেই চুক্তিপত্রের কপি তুলে ধরেন। তিনি নাম না করলেও গান্ধী পরিবারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে টানা ত্রিশ বছর কংগ্রেস মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে, এই জমিতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হবে। কিস্তু, সেখানে কোনও মেডিক্যাল কলেজ তো তৈরি হয়নি, উপরন্তু মেডিক্যাল কলেজের পরিবর্তে সেখানে ওই পরিবারের গেস্ট হাউস তৈরি হয়েছে। এদিন স্মৃতি ইরানি বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকারের আমলে আমেথিতে কোনও মেডিক্যাল কলেজ না হলেও মোদী সরকারের আমলে ২৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমেথিতে আমরা প্রথম মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করেছি। যাঁর মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির।
এরপর স্মৃতি ইরানি নথিপত্র সহ কংগ্রেস আমলে আমেথিতে আরও একটি চাঞ্চল্যকর জমি কেলেঙ্কারির তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমেথির বাসিন্দাদের কাছ থেকে সম্রাট সাইকেল কোম্পানির জন্য ৬০-৬৫ একর জমি নেওয়া হয়েছিল। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে সেই জমিটি রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।” শিল্পপতিদের প্রথমে কারখানা করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে আনা হয়। সেই মতো সেখানে কারখানা নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু, হঠাৎ সেখানে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং জমিটি ফাউন্ডেশনের হাতে চলে যায়। যখন রাহুল গান্ধী আমেথির সাংসদ। প্রসঙ্গত ২০১৯ এর আগে এই লোকসভা কেন্দ্রে কয়েক দশক ধরে যুগপৎ গান্ধী পরিবারের কেউ না কেউ সাংসদ হয়ে এসেছেন।
স্মৃতি ইরানি আরও বলেন, ওই জমিতে কারখানা নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পর একটি পরিবারের হাতে হস্তান্তর হয়ে যায়। আর সেই পরিবার ফাউন্ডেশনকে নির্দেশ দেয়, এই জমিতে কোনও ব্যবসায়িক কার্যকলাপ করা যাবে না। বহু বছর হয়ে গেলেও সেই জমি এখনও খালি করেনি ওই ফাউন্ডেশন। কৃষকরা জমি ফেরত চেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও এখনও তার কোনও সুরাহা মেলেনি। আদালতের আদেশ শর্তেও সেই জমি এখনও ফেরত দেয়নি। তিনি বলেন, কংগ্রেস নেতারা গরিব মানুষের কথা বলে কোন মুখে? যদি সত্যিই তাঁরা গরিবের কথা ভেবে থাকে, তাহলে কেন সাইকেল কারখানা তৈরির নামে নেওয়া ৬৫ একর জমি ফেরত দেয়নি? কেন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির জন্য নেওয়া ৪০ একর জমি সরকারকে এখনও হস্তান্তর করেনি?
আমেথির বর্তমান সাংসদ স্মৃতি ইরানি রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রায় দেশের গরিব মানুষ সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি প্রসঙ্গে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলের সঙ্গে মোদী সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ অঞ্চলে মহিলাদের স্বনির্ভরশীল করার ক্ষেত্রে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউপিএ সরকারের আমলে দেশে মাত্র ১৯ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্ৰুপকে সহযোগিতা করা হতো। এই সময়সীমার মধ্যে এই ১৯ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। কিন্তু মোদী সরকারের আমলে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে ৮১ লক্ষ হয়েছে। এবং এই ৮১ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্ৰুপকে ৪ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রদান করেছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেশের ৩১ কোটি মানুষের ক্যান্সার স্ক্রিনিং হয়েছে। যার মধ্যে ১৩ কোটিরও বেশি গরিব মহিলার ক্যান্সার স্ক্রিনিং হয়েছে। এতদিন গরিব মহিলাদের ক্যান্সার হলেও তাঁরা জানত না কিভাবে এর চিকিৎসা করানো যেতে পারে। কিছু না জেনে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ত তাঁরা। আজ আয়ুষ্মান ভারত সেইসব গরিব মহিলাদের সুরক্ষা কবচ দিয়েছে।