বাব সিদ্দিকি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত অনমল বিষ্ণোইকে অবশেষে আমেরিকা থেকে দেশছাড়া করা হয়েছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের তরফে পাঠানো একটি আনুষ্ঠানিক ই-মেলেই এই তথ্য জানানো হয়েছে। সেই বার্তা পৌঁছেছে নিহত এনসিপি নেতা বাব সিদ্দিকির ছেলে জীশান সিদ্দিকির কাছে। ই-মেলে স্পষ্টভাবে লেখা— ‘অনমল বিষ্ণোইকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’। এই বার্তা পাওয়ার পরই ভারত সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন জীশান। তাঁর বক্তব্য, ‘অনমলকে অবিলম্বে ভারতে প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সে বাবার হত্যার মতো নৃশংস অপরাধের বিচার থেকে আর পালাতে না পারে।’
লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভাই অনমল বহু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক আইনের চোখে পলাতক। বাব সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি সিধু মুসেওয়ালা হত্যায়, দিল্লির সলমন খান-বাড়ির সামনে গুলিচালনার ঘটনায়, উত্তরভারতের একাধিক দস্যুবৃত্তি ও চাঁদাবাজির মামলায় তাঁর নাম সামনে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কমপক্ষে ১৮টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মুম্বই পুলিশের বিশেষ দপ্তর তাঁর বিরুদ্ধে এমসোকা আইনে কঠোর ধারায় মামলা রুজু করে, আদালতের তরফে জারি হয় অ-জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে বান্দ্রায় প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে খুন করা হয় বাব সিদ্দিকিকে। তদন্তে উঠে আসে অনমল বিষ্ণোইয়ের ভূমিকার আভাস। এরপর থেকেই তাঁর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছিল ভারত সরকারের তরফে। মার্কিন প্রশাসনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে নতুন দিগন্ত খুলে গেল। যদিও তাঁকে ঠিক কোন দেশে পাঠানো হয়েছে বা কীভাবে ভারতে আনা হবে, তা নিয়ে এখনও প্রকাশ্য কোনও মন্তব্য করেনি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ।
জীশান সিদ্দিকির দাবি, ‘মার্কিন দপ্তর বলেছে অনমলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরানো হয়েছে। এখন ভারতের দায়িত্ব— তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বাবার হত্যার বিচার সম্পূর্ণ করা।’ তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা দপ্তরগুলির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ চলছে।
আইনজীবীদের মতে, ডিপোর্টেশনের পরে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া সাধারণত সহজ হয়। যদি অনমলকে এমন দেশে পাঠানো হয়ে থাকে যাদের সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তবে তাঁকে ভারতীয় তদন্ত সংস্থার হেফাজতে আনা সময়সাপেক্ষ হলেও জটিল হবে না। তদন্তকারীদের ধারণা, একবার ভারতে এলে বাব সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডের বহু অজানা দিক সামনে আসতে পারে।
এদিকে লরেন্স বিষ্ণোই চক্রের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিস্তার ঠেকাতে এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তাঁদের কথায়, ‘অনমল দেশে ফিরলে গোটা নেটওয়ার্কটাই নড়েচড়ে বসবে।’
previous post
