কলকাতা, ২ ডিসেম্বর— রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর–এর কাজ এগোতে না এগোতেই উঠল চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন সাত দিন পিছিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার মধ্যেই কমিশন জানাল, আপাতত রাজ্যের মোট ৪৩ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তার মধ্যে মৃত ভোটার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন ২১ লক্ষ ৪৫ হাজার জন। নিখোঁজ ভোটারের সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৫৩ হাজার। বাড়ি বদল বা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন ১৫ লক্ষ ১৩ হাজার ভোটার।
পাশাপাশি চিহ্নিত হয়েছে ৯৮ হাজার ৬০০ ভুয়ো ভোটার—যা কমিশনের কাছে বিশেষভাবে উদ্বেগের।এসব তথ্যের পাশাপাশি আরও এক বিস্ময়কর ছবি স্পষ্ট হয়েছে বুথ–ওয়ারি ডিজিটাইজেশন থেকে। রাজ্যের প্রায় সাত হাজার বুথের আপলোড হওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে কমিশন দেখতে পেয়েছে, মোট ২২০৮টি বুথে একটিও ‘আনকালেক্টেবল’ বা অসংগৃহীত ফর্ম নেই। অর্থাৎ ওই বুথগুলিতে গত এক বছরে কেউ মারা যাননি, কেউ স্থানান্তরিত হননি, এমনকি কোনও ভোটার নিখোঁজও হননি—যা কমিশনের মতে বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতিকে কমিশন তীব্র সন্দেহের চোখে দেখছে।কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি ‘শূন্য-আনকালেক্টেবল’ বুথ?সবচেয়ে বেশি ৬০৮টি বুথ দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। দ্বিতীয় স্থানে ২২৮টি বুথ নিয়ে পুরুলিয়া।
মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং নদিয়ায় ক্রমানুসারে ২২৬, ২১৬ এবং ১৩০টি বুথে এই অস্বাভাবিক অবস্থা দেখা গিয়েছে। বাঁকুড়ায় এমন বুথ আছে ১০১টি।এদিকে কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার দুই কমিশনারেট এলাকাতেও আনকালেক্টেবল ফর্মের হার যথেষ্ট বেশি। দক্ষিণ কলকাতায় এই হার ১৯.৩৮ শতাংশ এবং উত্তর কলকাতায় ১৯.১২ শতাংশ। অর্থাৎ দুই শহরেই মৃত, নিখোঁজ ও স্থানান্তরিত ভোটারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।ডিজিটাইজেশন–এ কোথায় এগিয়ে, কোথায় পিছিয়েবসিরহাট উত্তরে ডিজিটাইজেশন সর্বাধিক—৯৬.০৫ শতাংশ।
সবচেয়ে কম ডিজিটাইজেশন হয়েছে ভাটপাড়ায়—৭৪.০৯ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি আনকালেক্টেবল ফর্ম পাওয়া গিয়েছে বারাকপুরে—১৫.৬২ শতাংশ।
সবচেয়ে কম বসিরহাট উত্তরে—৩.৩৭ শতাংশ।কমিশন সূত্রে খবর, এই বিপুল অসঙ্গতির প্রেক্ষিতে সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিএলও এবং ইআরও–দের এনুমারেশন ফর্মে কোনও ভুল এন্ট্রি হয়ে থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। এসআইআরের বাড়তি সময়সীমার মধ্যেই সব সংশোধন শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।রাজনৈতিক মহলের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ নানা কারণে শ্লথ হয়ে থাকায় বহু গরমিল জমে উঠেছিল। এসআইআর–এর নতুন প্রক্রিয়া সেই পুরোনো গরমিল একে একে বের করে আনছে। কমিশন এখন চাইছে—১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে সমস্ত অসঙ্গতি শুদ্ধ করে স্বচ্ছ ও নির্ভুল একটি তালিকা তৈরি করতে।
