28 C
Kolkata
September 25, 2025
রাজ্য

কৃষকের ফসলের লাভকারী মূল্য আদায় করেই ছাড়ব, বলল ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’

নিজস্ব চিত্র

পারুল খামারিয়া, বীরভূম, ১২ মে: পশ্চিমবঙ্গের দশ হাজার গ্রামে ভারতীয় কিষাণ সংঘের গ্রাম সমিতি গঠন করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করল ভারতীয় কিষাণ সংঘ। এই মূহুর্তে রাজ্যের ৪০০০২ টি গ্রাম নথিভুক্ত আছে। তার মধ্যে প্রায় দ’হাজার গ্রামে গ্রাম সমিতি আছে এই সংগঠনের। মূলত কৃষি এবং কৃষকদের উন্নতির জন্য সারা ভারতজুড়ে কাজ ক’রে চলেছে এই সংগঠন, ১৯৭৯ সালের ৪ ঠা মার্চ, প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে। যদিও আমাদের রাজ্যে এই সংগঠন কাজ করছে ১৯৮২-৮৩ সাল থেকে। বর্তমানে সারা ভারতে এদের সদস্য সংখ্যা ৪৩ লক্ষ আর আমাদের রাজ্যে ২৫০০০-এর মতো। কৃষকদের নিয়ে গঠিত এটিই ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো অরাজনৈতিক সংগঠন।

১০ ও ১১ ই মে দু’দিন ব্যাপী এই সংগঠনের প্রশিক্ষণ শিবিরে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ টি জেলার ৭২ জন কার্যকর্তা উপস্থিত হয়েছিলেন বীরভূম জেলার রামপুরহাটের ‘ভারত মাতা’ ভবনে। এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় কোষাধ্যক্ষ যুগল কিশোর। তিনি বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘের কার্যকর্তাদের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে যেতে হবে। কৃষকদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে হবে। তাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য কাজ করতে হবে।

অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য কল্যাণ কুমার মন্ডল বলেন, আমাদের সংগঠন অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠন কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলে না। এই সংগঠন কৃষকদের জন্য,কৃষক দ্বারা পরিচালিত সংগঠন। প্রতিটি কৃষক আমাদের নেতা।

ভারতীয় কিষাণ সংঘের উত্তর ও উত্তর-পূর্বের সংগঠন সম্পাদক শ্রীনিবাস বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘের প্রতিটি কার্যকর্তাকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। নিজেরা শিখতে হবে ও অন্যদের শেখাতে হবে। গ্রামের মহিলাদের স্ব-শক্তিকরণ করতে হবে। তার জন্য অহল্যাবাঈ হোককারের ৩০০ তম জন্মদিন প্রতিটি জেলায় পালন করতে হবে,যাতে তাদের মানসিক শক্তি আরও বাড়ে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে বেশি করে যুক্ত হন। যুবকদের সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিকাজ করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সমাজের উন্নতি কল্পে এগিয়ে যেতে হবে।

ভারতীয় কিষাণ সংঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সহ-সভাপতি পঙ্কজ বন্ধু ‘পঞ্চ নীতি’ নিয়ে আলোচনা করেন। স্বদেশী অর্থাৎ দেশের পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা, সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। কুটুম্ব প্রবোধন অর্থাৎ সবাইকে আত্মীয় হিসাবে জ্ঞান করতে হবে। নাগরিক শিষ্ঠাচার অর্থাৎ নাগরিক কর্তব্য গুলো পালন করতে হবে। এ দেশ আমার, তাকে রক্ষা করা ও সুন্দর রাখার দায়িত্বও আমার – এই ভাবে সবাইকে জাড়িত করতে হবে। পর্যাবরণ অর্থাৎ সমস্ত পশু-পক্ষী, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। এছাড়া শেষ নীতি হল সামাজিক সমরসতা অর্থাৎ সমাজের মধ্যে জাত-পাতে বিভেদ মেটাতে হবে। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা সনাতনী হিন্দু।

ভারতীয় কিষাণ সংঘের পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী অনিল রায় ২০২৪-২৫ সালের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য সবাইকে জানান। প্রান্তের কোষাধ্যক্ষ অষ্টগোপাল পাল সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার জন্য কার্যকর্তাদের অনুরোধ জানান।

দু’দিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির ও যোজনা বৈঠক সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি অনিমেষ পাহাড়ি বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের সংগঠন বিস্তার লাভ করছে। আমাদের সংগঠনাত্বক, রচনাত্বক ও আন্দোলনাত্বক কাজের মাধ্যমে সংগঠনের বিস্তার লাভ করাতে হবে। কৃষক সমাজ সংঘবদ্ধ হলে তবেই তারা ফসলের লাভকারী মূল্য আদায় করতে সক্ষম হবে। আমরা সহায়ক মূল্য নয়, লাভকারী মূল্য চায়। সে দাবি আমরা আদায় করেই ছাড়ব।

দু’দিনের এই শিবির সম্পর্কে ভারতীয় কিষাণ সংঘের প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকা সম্পাদক মিলন খামারিয়া বলেন, আমরা প্রচারের মাধ্যমে আমাদের সংগঠন সম্পর্কে কৃষক ভাইদের জানাচ্ছি। অনেক মানুষ আজ আমাদের সংগঠনে সাথে স্বেচ্ছায় যুক্ত হচ্ছেন। আমাদের ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকা পড়ছেন ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি কৃষক আমাদের সংগঠন সম্পর্কে জেনে যুক্ত হোক,এটা আমরা চাইছি।

দু’দিনের এই শিবিরের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বীরভূম জেলার সভাপতি শিবশঙ্কর মন্ডল ও জেলা সম্পাদক শিশির মন্ডল এবং শিবিরের সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার।

Related posts

Leave a Comment