লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার মাসাধিক পেরোলেও থামছে না বিতর্ক। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সোজাসুজি অভিযোগ তুলেছেন—দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে, জাল ভোটার ঢুকিয়ে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে কর্ণাটক—একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। শুধু কর্ণাটকের মহাদেবপুরা আসনেই নাকি পড়েছে এক লক্ষেরও বেশি জাল ভোট। আর সেই ভোটেই বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত হয়েছে। রাহুলের অভিযোগ, প্রায় ৭০ আসনে কংগ্রেস পঞ্চাশ হাজারের কম ভোটে হেরেছে—সেখানে এই জালিয়াতির ছাপ স্পষ্ট।
এমন বিস্ফোরক অভিযোগে তোলপাড় রাজনীতি। বিরোধীরা একবাক্যে সুর মিলিয়েছে রাহুলের অভিযোগে। তবে পালটা জবাবে আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার দিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার রাহুলের নাম না করেই কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন। তাঁর বক্তব্য—‘ভোটচুরি’র মতো শব্দবন্ধ কেবল দেশকে বিভ্রান্ত করছে। জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা চলছে। কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাধারণ ভোটারকে নিশানা করা হচ্ছে।
কমিশনের সাফ কথা, ভোটার তালিকা তৈরির প্রতিটি ধাপই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলির হাতে থাকে সংশোধনের সুযোগ। অভিযোগ থাকলে তা জানানো যায়, খতিয়ে দেখা হয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরও আপত্তির সুযোগ থাকে। এমনকি ভোটের ফল ঘোষণার পরও ৪৫ দিন পর্যন্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়। তাহলে এতদিন মুখে কুলুপ এঁটে থেকে আজ কেন ‘ভোটচুরি’ বলে চিৎকার, সেই প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
এখানেই শেষ নয়। কমিশন আরও একধাপ এগিয়ে রাহুলের সাংবাদিক বৈঠকে দেখানো ছবি-ভিডিও নিয়েও আপত্তি তুলেছে। দাবি করেছে—অনুমতি ছাড়া ভোটারের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন, যা ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টও স্পষ্ট করেছে।
অভিযোগ বনাম জবাব—এই দুই স্রোতে যেন দেশজুড়ে ফের রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। বিরোধীরা বলছে, কমিশন মূল প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে। কমিশনের দাবি, বিরোধীরা সময়মতো আপত্তি না জানিয়ে এখন ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
