বৈষ্ণোদেবী যাত্রাপথে মঙ্গলবার এক ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ৩২ জন তীর্থযাত্রী মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ১৬ জন নারী ও ২ শিশু রয়েছে। ঘটনায় আরও ২৩ জন আহত হয়েছেন বলে বুধবার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে, বাকিদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হয়নি।
মৃতরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন। সেনা, সিআরপিএফ, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ-এর উদ্ধারকাজ চলতে থাকে এবং ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে, যাতে কেউ আটকে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।প্রথমে বৈষ্ণোদেবী শ্রাইন বোর্ড জানিয়েছিল ৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। তবে ধ্বংসস্তূপ সরানোর সাথে সাথে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।অবিরাম বৃষ্টির ফলে সোমবার থেকে জম্মু অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটার পর বৈষ্ণোদেবী যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (X)-এ শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, “শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরগামী পথে ভূমিধসে প্রাণহানি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক—এই কামনা করি। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বতোভাবে সহায়তা করছে।”বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরে বন্যা ও দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।সকালে শ্রীনগর থেকে বিমানে এসে ওমর আবদুল্লাহ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেন।
তিনি এক্স-এ লেখেন, “কিছুক্ষণ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজির সঙ্গে কথা বললাম। আমি জম্মুর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেছি। মানুষের জন্য অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।”তিনি তীর্থযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি বাগওয়াতিনগরে তাওই নদীর উপর নির্মিত ৪র্থ সেতু পরিদর্শন করেন, যেখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।এর আগে চলতি মাসের শুরুতে খারাপ আবহাওয়ায় কিশ্তওয়াড় জেলার মাচাইল মাতার যাত্রায় অন্তত ৬৭ জন মারা যান এবং প্রায় ৪০ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।অবিরাম বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেসে গেছে, যার মধ্যে দুটি জম্মু-পাঠানকোট মহাসড়কে।
সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবাও ব্যাহত হয়েছে।লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা কর্মকর্তাদের বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ দ্রুত পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি এক্স-এ জানিয়েছেন, ৫০০০-এর বেশি মানুষকে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। সেনা, এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ ও সহায়তা দিচ্ছে।কাশ্মীর উপত্যকাতেও বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ডিভিশনাল কমিশনার, কাশ্মীর এক্স-এ লেখেন, “বর্তমান আবহাওয়ার কারণে শ্রীনগরের রাম মুঞ্চি বাগ এলাকায় ঝিলম নদীর পানি সতর্কতার সীমা অতিক্রম করেছে।”এদিকে সেনা ও সিআরপিএফ মিলে বন্যায় আটকে পড়া ১১ জন বিএসএফ ও ৯ জন সেনা সদস্যকে উদ্ধার করেছে।কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে বন্যায় আটকা পড়লে তাঁদেরও উদ্ধার করা হয়। একইভাবে সুয়ানঝনা এলাকায় বন্যায় আটকে পড়া স্কুলশিক্ষার্থীদের সেনা সদস্যরা উদ্ধার করেছেন।দুর্যোগের কারণে আজ জম্মু বিভাগের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বাইরে বেরোনোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
previous post
