প্রতি বছরের মতো এই বছরেও এম.ডি. চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে, স্বাস্থ্য ভবনের তত্ত্বাবধানে একটি ‘স্বচ্ছ’ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিনিয়র রেসিডেন্টদের বন্ড পোস্টিং সম্পন্ন করা হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় বর্ষের ৭৭৮ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক বিভিন্ন হাসপাতালে যোগদানের প্রাথমিক পত্র পান। তাঁদেরই একজন, ডা. দেবাশিস হালদার, গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি, নিয়মমাফিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে হাওড়া জেলা হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগে সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবে পদায়িত হন।
কিন্তু ২৬শে মে, স্বাস্থ্য ভবনের তরফে যে চূড়ান্ত নিয়োগতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যায়—৭৭৭ জন চিকিৎসকের পোস্টিং অপরিবর্তিত থাকলেও, শুধুমাত্র ডা. দেবাশিস হালদারের পোস্টিং রহস্যজনকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালের পরিবর্তে, হঠাৎ করে করে মালদা জেলার গাজোল হাসপাতালে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনিকেত মাহাতো এবং আসফাকুল্লাকেও একইভাবে দূরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখযোগ্য, এই পদটির অস্তিত্বই ছিলো না ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারের তরফ এ প্রকাশ করা শূন্যপদ এর তালিকায়, এমনকি ২৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সেলিং এর দিন পর্যন্তও। এই সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই, প্রশাসনিক প্রতিহিংসা ছাড়া।
মেধা এবং নিয়মকানুন উপেক্ষা করে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, ২০২৪ সালের ৯ই আগস্ট আর.জি. কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যে জুনিয়র চিকিৎসকরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন ডা. দেবাশিস হালদার। অতীতেও আমরা দেখেছি, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের ওপর সরকারি নিপীড়নের দৃষ্টান্ত—সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করেও।
তবে এবারের ঘটনা সম্পূর্ণভাবে নিয়মবহির্ভূত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিহিংসার চরম উদাহরণ। ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর ফ্রন্ট (WBJDF) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। অবিলম্বে ডা. দেবাশিস হালদারকে তাঁর নির্ধারিত মেরিটলিস্ট অনুযায়ী পাওয়া পদে নিয়মমাফিক পুনর্বহাল করা হোক।
আমরা সমস্ত সচেতন নাগরিক, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলকে এই ধরনের অনিয়ম ও দমনমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।
next post