25 C
Kolkata
November 3, 2025
Featured

স্বদেশী ব্যবহারই ‘বিকশিত ভারত’ গঠনের একমাত্র পথ মনে করে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ

নিজস্ব চিত্র

অসীমলাল মুখার্জি: পূর্ব বর্ধমান, ১১ আগস্ট। গত ৯ অগাস্ট তারিখে সারা দেশের সাথে তাল মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও পালিত হল ‘বিদেশী কোম্পানি ভারত ছাড়ো, স্বদেশী পণ্য আপন করো’ অভিযান। এদিন পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই কমবেশি আন্দোলন করা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বদেশী’ আহ্বানকে জানিয়েছে ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ’। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, স্বদেশী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করাও জাতির জন্য একটি সত্যিকারের সেবা। প্রধানমন্ত্রীর ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ।

১৯৯১ সালের ২২ শে নভেম্বর ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণের জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে আসছে এই সংগঠন। এই মঞ্চ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, আমাদের জাতি কেবল স্বদেশী এবং স্বনির্ভরতার ভিত্তিতেই সমৃদ্ধ হতে পারে।

আমেরিকা, চীন, বাংলাদেশ, ইত্যাদি রাষ্ট্র আমাদের দেশে ব্যবসা করে আমাদেরই পরোক্ষভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, দেশীয় উৎপাদন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বদেশী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে ।

১২ই জুন, ২০২৫ তারিখে স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ কর্তৃক বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী, শিল্প-সমিতি এবং সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় ‘স্বদেশী সুরক্ষা ও স্বাবলম্বন অভিযান’ চালু করার মাধ্যমে, স্বদেশী আন্দোলনকে একটি নতুন প্রেরণা দেওয়া হয়েছে – যার লক্ষ্য হল ভারতকে আবার মহান করে তোলার জন্য দেশের প্রতিটি কোণে কোণে সচেতনতা তৈরি করা, যাকে প্রধানমন্ত্রী ‘MIGA’ ( Make India Great Again) বলেছেন।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে স্বদেশী আন্দোলন কেবল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধেই নয়, ব্রিটিশ পণ্যের বিরুদ্ধেও ছিল। অর্থনৈতিক মর্যাদা, সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সভ্যতার সার্বভৌমত্বেরও দাবি ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হওয়া স্বদেশী আন্দোলন আসলে বিদেশী পণ্য প্রত্যাখ্যান, দেশীয় উৎপাদন পুনরুদ্ধার এবং ভারতের স্বনির্ভর অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্র পুনর্গঠনের আহ্বান ছিল।

নতুন ডিজিটাল কোম্পানি গুলি একচেটিয়া – অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট (ফ্লিপকার্ট) এবং অন্যান্য পশ্চিমা ই-কমার্স জায়ান্ট হল একবিংশ শতাব্দীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এই প্ল্যাটফর্মগুলি ভারতের ঐতিহ্যবাহী খুচরো বাণিজ্যকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ীকে প্রান্তিক করছে।স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের অধীনে চলা ‘স্বদেশী সুরক্ষা ও স্বাবলম্বন অভিযান’-এর একমাত্র লক্ষ্য আমাদের ভারতকে আবার মহান করে তোলা।

এই বিষয় নিয়ে ‘স্বাবলম্বী ভারত অভিযান’-এর মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সহ-সমন্বয়ক মিলন খামারিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা চাই – আমাদের দেশের মানুষ দেশীয় পণ্য ব্যবহার করুক, তাতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। বিদেশি কোম্পানি এখানে ব্যবসা করে মুনাফা ক’রে, তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে অনেক সময় আমাদের ক্ষতি করার জন্যই তার ব্যবহার করছে। শত্রু দেশের পণ্য ব্যবহার করা মানে নিজেদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করা ও দেশের মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া। তাই গত ৮ থেকে ১০ ই আগস্ট পর্যন্ত আমরা বিদেশি কোম্পানি ভারত ছাড়ো অভিযানের ডাক দিয়েছিলাম। এই অভিযানে দেশের নাগরিকদের আমরা সচেতন করার চেষ্টা করেছি। লিফলেট দিয়েছি – কোনটা স্বদেশী ও কোনটা বিদেশি কোম্পানি – তার তালিকা দিয়েছি। দেশের নাগরিকরা পণ্য কেনার সময় যেন সচেতন থাকেন এবং দেশীয় পণ্য কেনেন, সে সম্পর্কে সচেতন করার জন্যই এই অভিযানের ডাক দিয়েছি।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সমন্বয়ক ডা: দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেশকে শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়তে গেলে আমাদের সবাইকে স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশের প্রয়োজনীয় জিনিস যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি, সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যুবক/যুবতীরা উদ্যোক্তা হিসেবে উঠে আসুক, তাতে তাদের ও দেশের সার্বিক বিকাশ হবে।

স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের পূর্ব ক্ষেত্রের সহ-ক্ষেত্র সংযোজক অম্লান কুসুম ঘোষ বলেন, ভারতকে পুনরায় একটি শক্তিশালী ও মহান দেশ হিসেবে গড়ে তোলায় আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দেশের নাগরিকরা যদি আমাদের দেশীয় কোম্পানির দ্রব্য ব্যবহার করেন তাহলে ২০৪৭ সালের মধ্যেই আমাদের দেশ ‘বিকশিত ভারত’ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে সক্ষম হবে।

Related posts

Leave a Comment