November 1, 2025
বিদেশ

নেপালের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন প্রাক্তন বিচারপতি সুশীলা কারকি

কাঠমান্ডু, ১২ সেপ্টেম্বর: নেপালে দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। শপথ নিয়ে তিনি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে নেপাল প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে একজন নারীকে প্রতিনিধি হিসেবে পেল।

শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল নিবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি রামসহায় প্রসাদ যাদব, প্রধান সচিব বৈকুণ্ঠ আর্যाल, প্রবীণ সরকারি কর্মকর্তা, সেনা বাহিনীর প্রধান এবং কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা।

কার্কির এই নিয়োগ এলো দেশজুড়ে জেনারেশন জেড তরুণদের নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে। সেই আন্দোলনে নেপালের রাজনৈতিক কাঠামো কেঁপে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি পৌডেল ও সেনাপ্রধান দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের উদ্যোগ নেন।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কার্কির কাঁধে এখন নেপালকে এক অস্থির ও গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া তার মূল কাজ। নির্বাচন শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়াও তার দায়িত্বের অংশ।

সাম্প্রতিক সহিংস আন্দোলনে সরকারি কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং জনগণের আস্থা টালমাটাল। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে হবে কার্কিকে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সৎ ও নির্ভীক বিচারপতি হিসেবে তার ভাবমূর্তিই তাকে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রেখেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি সুপরিচিত।

তাঁর শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে নেপালে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পরিবর্তনের সূচনা হলো। আলোচনায় আছে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার সম্ভাবনাও। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও আন্দোলনরত তরুণদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে।

তবে কার্কির পথ সহজ নয়। ক্ষুব্ধ জনতা সামলানো, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা—সবই তাঁর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও ইতিহাস তৈরি করেছেন সুশীলা। নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনিই। এবার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি আরেকটি রেকর্ড গড়লেন। এর ফলে তিনি সমস্ত বাধা সরিয়ে দেশে নারীর নেতৃত্বের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় তিনি হবেন জনতার রাস্তাঘাটের ক্ষোভ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। এই মুহূর্তটিকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের ভিত্তি বানাতে পারবেন কিনা, তা নির্ভর করবে তরুণদের দাবির সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তবতাকে কতটা ভারসাম্যে রাখতে পারেন তার ওপর।

Related posts

Leave a Comment