লোকসভা ভোট শেষ, ফলাফল ঘোষণার পর পেরিয়েছে দেড় মাসেরও বেশি সময়। অথচ দেশজুড়ে যেন থামছেই না রাজনৈতিক ঝড়। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী মঞ্চ থেকে মাইকে ঘোষণা করলেন—“২০২৪-এর ভোটে নজিরবিহীন কারচুপি হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, ভুয়ো ভোটারদের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা আসনে এক লক্ষেরও বেশি জাল ভোট পড়েছে। সেই ভুয়ো ভোটেই বেঙ্গালুরু সেন্ট্রালে জয়ী হয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, প্রায় ৭০ আসনে কংগ্রেস অল্প ব্যবধানে হেরেছে—রাহুলের অভিযোগ, সেই সব জায়গাতেই বড়সড় ভোট জালিয়াতি হয়েছে।
বিরোধীরা একবাক্যে রাহুলের পাশে দাঁড়ালেও, রবিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া দিল নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার রাহুলের নাম না নিয়েই সরাসরি কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন—“কমিশনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে। ‘ভোটচুরি’র মতো শব্দ শুধু দেশের সংবিধানকেই অপমান করছে।”
তিনি আরও বলেন, ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং কঠোর নিয়মে চলে। শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলিকে খসড়া তালিকা দেওয়া হয়। আপত্তি, সংশোধন, বিয়োজন—সবকিছুর সুযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ থাকলে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ভোট শেষ হওয়ার পরও ৪৫ দিন পর্যন্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায়। এত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তখন কেউ মুখ খোলেনি, অথচ এখন রাজনৈতিক স্বার্থে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে—কমিশনের সাফ সাফাই।
এখানেই থেমে থাকেনি কমিশন। রাহুল গান্ধীর সাংবাদিক বৈঠকে দেখানো ছবি ও ভিডিও নিয়েও আপত্তি তুলেছে তারা। দাবি করা হয়েছে—অনুমতি ছাড়া কোনও ভোটারের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা গোপনীয়তার অধিকারের লঙ্ঘন, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় রয়েছে।
ফলে প্রশ্ন এখন একটাই—বিরোধীদের অভিযোগ কি সত্যিই বাস্তব, নাকি শুধুই রাজনৈতিক চাল? কমিশনের দাবি, সবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কমিশন মূল প্রশ্নে এড়িয়ে যাচ্ছে।
একদিকে রাহুল গান্ধীর বিস্ফোরক অভিযোগ, অন্যদিকে কমিশনের তীব্র কটাক্ষ—এই দুই পক্ষের সংঘাতে জাতীয় রাজনীতি ফের তপ্ত হয়ে উঠেছে। সংসদ ভবন থেকে চায়ের আড্ডা—সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা, ভোট সত্যিই চুরি হয়েছে কি?
previous post
