হুগলির সিঙ্গুরে তরুণী নার্সের অকাল মৃত্যু শুধু এক পরিবারের নয়, গোটা সমাজের হৃদয়ে গভীর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। প্রথমে পরিবারের অভিযোগ ছিল—মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কান্নাভেজা কণ্ঠে বাবার আর্তি ছিল, “মেয়েকে ন্যায্য বিচার দাও।” কিন্তু পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসছে এক অন্য কাহিনি—প্রেম, ভরসা, প্রতিশ্রুতির ভাঙন আর মানসিক আঘাতের করুণ অধ্যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত নার্সের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে ছিলেন এক যুবক। কাজের সূত্রেই আলাপ, তারপর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা। একসঙ্গে বেড়ানো, হোটেলে থাকা—সবই চলছিল। কিন্তু প্রেমিকার কাছে একটাই প্রত্যাশা ছিল—বিয়ে। সেই প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন তিনি, নিরাপদ ভবিষ্যতের ভরসা খুঁজেছিলেন। অথচ প্রেমিক নাকি বারবার সেই দাবিকে নস্যাৎ করছিলেন।
ধৃত যুবককে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার মাত্র দু’দিন আগে ডানকুনির এক হোটেলে তাঁরা রাত কাটান। কিন্তু বিয়ের প্রসঙ্গ উঠলেই এড়িয়ে যেতেন যুবক। ওই চাপ, মানসিক যন্ত্রণা আর অসহায়তার দগদগে ক্ষত নিয়েই হয়তো নার্স শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন শেষ করার পথ বেছে নিলেন।
যুবক একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চাকরি করতেন। তাঁর কাছেই ভরসা করে এগিয়ে এসেছিলেন নন্দীগ্রামের মেয়েটি। কিন্তু সেই বিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত ভেঙে দিল সবটুকু আলো।
প্রথমে পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করলেও পরিবারের অভিযোগে খুনের মামলা শুরু হয়। ইতিমধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তার মধ্যে রয়েছে ওই প্রেমিকও।
এখনও তদন্ত চলছে। সত্যিই কি এটা আত্মহত্যা? নাকি তার আড়ালে লুকিয়ে আছে আরও গভীর অন্ধকার? উত্তর খুঁজছে পুলিশ, আর সমাজ নীরবে দেখছে—এক তরুণীর স্বপ্ন ভাঙনের নির্মম ছবি।
