ঢাকা, ১৭ নভেম্বর— বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যু-দণ্ডে দণ্ডিত করেছে। গত জুলাই মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে ভূমিকা ও প্রতিরোধে ব্যর্থতা’র অভিযোগেই এই রায় দেওয়া হয়েছে। ভিড়ে ঠাসা আদালতকক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় টিভি বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় রায় এই ঘোষণা।
একই মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন হাসিনার সরকারের দুই শীর্ষ কর্তা—সাবেক স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। কামাল পলাতক। মামুন হেফাজতে রয়েছেন এবং দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়েছেন।২০১০ সালে আইসিটি গঠনের পর প্রথম কোনও অভিযুক্ত এই ভূমিকা নিলেন।
৮ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ছিল ভুক্তভোগীদের বিবৃতি, উদ্ধার করা তথ্য, দলিল এবং গত জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের সময়কার ‘রাজনৈতিক নির্যাতন ও সহিংসতা’র বর্ণনা। পাঁচ দফা অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ তিনজনেরই মৃত্যু-দণ্ড চেয়েছিল এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্দেশে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করেছিল।
হাসিনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতে হাজির হননি। দেশে ফেরার নোটিস দেওয়া হলেও তিনি অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেছে।
রায়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ঢাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ এমদাদ সাজ্জাত আলী নির্দেশ দেন, আগুন লাগানো, ‘ককটেল’ বিস্ফোরণ বা জননিরাপত্তা ক্ষুণ্ণের চেষ্টা করলেই গুলিচালনার অনুমতি থাকবে।
একই সময়ে আওয়ামী লীগের ডাকা ১৬–১৭ নভেম্বরের দু’দিনের ধর্মঘটে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট বিস্ফোরণ ও যানবাহনে আগুন লাগানোর ঘটনা বাড়তে থাকে। নারায়ণগঞ্জে গত ৩৬ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ২১ জন আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে—
— ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে হওয়া হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যর্থতা
— ছাত্রদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন
— বেআইনি আটক
— রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার
— সামগ্রিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে ভূমিকা
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ, ওই সময় ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সমন্বিত মাত্রাতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগের সুস্পষ্ট ধারাবাহিকতা’ প্রমাণিত হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
মৃত্যু-দণ্ড ঘোষণার পর মামলাটি আপিলপর্বে যাচ্ছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত হাসিনার আইনজীবী দল রায় চ্যালেঞ্জ করবে বলে জানা গিয়েছে। ঢাকা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তর সব জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছে।
