প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার বলেছেন, সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলনে প্রায় ৪০-৫০টি দেশের সেমিকন্ডাক্টর বিশেষজ্ঞদের সমাবেশ একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে যে, বিশ্ব ভারতকে বিশ্বাস করে এবং ভারতের সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টরের ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রস্তুত।
নয়াদিল্লির যশোভূমিতে অনুষ্ঠিত সেমিকন ইন্ডিয়া ২০২৫ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “আজ এখানে বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টরের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত আছেন, ৪০-৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, আর ভারতের উদ্ভাবনী শক্তি ও যুবশক্তিও এখানে দৃশ্যমান… এই সমন্বয় কেবল একটাই বার্তা দেয়—বিশ্ব ভারতকে বিশ্বাস করে, বিশ্ব ভারতের ওপর আস্থা রাখে এবং বিশ্ব ভারতের সঙ্গে মিলে সেমিকন্ডাক্টরের ভবিষ্যৎ গড়তে প্রস্তুত।”
মোদী জানান, তিনি প্রযুক্তির প্রতি ভীষণ আগ্রহী এবং সম্প্রতি জাপান সফরের সময় টোকিও ইলেকট্রন কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আমি প্রযুক্তির প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী। সম্প্রতি জাপান সফরের সময় আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা-সানের সঙ্গে টোকিও ইলেকট্রন কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রযুক্তির সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক আমাকে বারবার আপনাদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত শতাব্দী যেখানে তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেখানে ২১শ শতাব্দীর শক্তি এক ক্ষুদ্র চিপের ভেতর সঙ্কুচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক সময় বলা হতো তেল হলো ব্ল্যাক গোল্ড, কিন্তু চিপ হলো ডিজিটাল হীরা। তেল গড়ে তুলেছিল গত শতাব্দীকে, কিন্তু ২১শ শতকে এই ক্ষুদ্র চিপেই নিহিত রয়েছে শক্তি। এগুলো বিশ্ব অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা রাখে।”
তিনি জানান, একটি সেমিকন্ডাক্টর চিপ যতই ছোট হোক না কেন, সেটি অত্যন্ত দ্রুত বিশ্ব অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম।
মোদী আরও বলেন, বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে এবং ভারত এ বাজারে উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে গতিতে ভারত সেমিকন্ডাক্টর খাতে এগোচ্ছে, আমাদের দেশ এই ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারে বড়সড় অংশীদারিত্ব অর্জন করবে।”
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, গত কয়েক বছরে ভারতের সেমিকন্ডাক্টর খাত দ্রুত উন্নতি করেছে। তিনি বলেন, “২০২১ সালে আমরা সেমিকন ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম চালু করি। ২০২৩ সালে ভারতের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট অনুমোদিত হয়। ২০২৪ সালে আরও কয়েকটি প্ল্যান্ট অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৫ সালে আমরা আরও ৫টি প্রকল্প অনুমোদন করেছি। সবমিলিয়ে প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ১.৫ লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে ১০টি সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পে”।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী মোদী দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিকাশ ও দেশকে চিপ উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। গত মাসে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ভারতের প্রথম দেশীয়ভাবে নির্মিত চিপ বাজারে আসবে।