33 C
Kolkata
August 2, 2025
Featured

৪৯ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ‘রবীন্দ্র স্মরণে’ ‘রূপ ভারতী’

নিজস্ব চিত্র

মিলন খামারিয়া, কলকাতা, ১৮ মে: ১৯৭৬ সালের ২রা মে ‘শুভ অক্ষয় তৃতীয়া’র দিন, উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির কাছে, চোরবাগানের ‘চ্যাটার্জী বাড়ি’তে নৃত্যশ্রী কেকা চট্টোপাধ্যায়ের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রূপ ভারতী’ নামে নৃত্য প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন বিচারপতি শঙ্কর প্রসাদ মিত্র , অ্যাডভোকেট প্রমথনাথ পালিত, সমাজসেবী রমণ চট্টোপাধ্যায়, সমাজ সেবী নীলমণি মুখার্জী, যন্ত্র শিল্পী বিনয় ভূষণ ও তবলা বাদক শ্রীকান্ত বড়াল।

‘রূপ ভারতী’ নামের এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় নৃত্য শৈলী প্রচার করা এবং যুব সমাজ বিশেষত নারীদের মধ্যে তার বিস্তার ঘটানো; যাতে নৃত্যচর্চা এবং নৃত্য শিক্ষা সমাজে এক সম্মানীয় পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। গতকাল ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘রূপ ভারতী’ গর্বের সঙ্গে তার প্রাক-সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করল ‘ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল’-এ, সন্ধ্যয়। অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ‘রবীন্দ্র স্মরণে’।

এদিনের অনুষ্ঠানে সভাপতির পদ অলংকৃত করেন ‘অ্যালেন গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর কর্ণধার ডাঃ জি. পি. সরকার। উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত গায়ক শ্রীকুমার চ্যাটার্জী, প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী পলি গুহ, অভিনেতা অরিন্দম গাঙ্গুলি আরও অনেক গুণীজন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ক’রে এবং প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম স্বর্গীয় রমন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল নৃত্যানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা ও সঙ্গীত মিলিয়ে ‘রূপ ভারতী’র কচিকাঁচা শিশুদের নিয়ে ‘ছড়ার দেশে রবীন্দ্রনাথ’ অনুষ্ঠিত হয়; সংকলনায় ছিলেন অরিন্দম গাঙ্গুলী।

কবির নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ অবলম্বনে অনুষ্ঠিত হল ‘কল্যাণী’ নৃত্যনাট্য। ডঃ সূর্যাণী চ্যাটার্জ্জী প্রকৃতির ভূমিকায় এবং পলি গুহ মায়ের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এছাড়া নারীদের স্ব-শক্তিকরণ নিয়ে অনুষ্ঠিত হল ‘অন্ধকারের উৎস হতে’ নৃত্যনাট্য। নারীকে অবমাননা করে কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। নারীকে নিজেই নিজের শৃঙ্খল মুক্ত ক’রে এগিয়ে যেতে হবে। রবীন্দ্রনাথের নারীরা ‘সবলা’ হবে। এই ভাবনায় প্রকাশ করা হয়েছে নৃত্যনাট্যতে।

সংস্থার সম্পাদক ডঃ সূর্যাণী বলেন, আজ ‘রূপ ভারতী’র ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমরা যেমন বলতে পারি, আমাদের মূল উদ্দেশ্য নৃত্য চর্চা এবং নৃত্য শিক্ষাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা;সেটি করতে পেরেছি অনেকটাই। পাশাপাশি এও বলতে চাই যে, আগামী দিনে আমরা এই ভারতীয় নৃত্যশৈলীকে সমাজের প্রান্তিক স্তরে নিয়ে যেতে চাই; যেখানে এখনো পর্যন্ত তথাকথিত নৃত্যের কোনো শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নেই বা সেই সকল মানুষের সামর্থ নেই কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নৃত্যশিক্ষা অর্জন করার তেমন কিছু মানুষের কাছে নৃত্য শিক্ষাকে পৌঁছে দিতে চাই আমরা; যাতে তারাও আমাদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে নৃত্যচর্চা করতে পারে। এবং এও বলতে চাই, নৃত্যচর্চা শুধু বিনোদনের জন্য নয়; শারীরিক বিভিন্ন ব্যাধি নিরাময়ের ক্ষেত্রেও যে সাহায্য করে, সেটা যেমন সত্য তেমন তাকে প্রতিষ্ঠিত করতেও চাই।

সংস্থার অধ্যক্ষা নৃত্যশ্রী কেকা বলেন, আজ আমার খুবই গর্বের দিন। আমার তৈরি করা প্রতিষ্ঠান ‘রূপ ভারতী’ প্রচুর বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে প্রাক সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ পালন করছে। এর পেছনে প্রচুর পরিশ্রম, প্রচুর লড়াই এবং প্রচুর ধৈর্যের পরীক্ষা আছে। কিন্তু তাও আজ যখন দেখি, আমার নিজের ছাত্র-ছাত্রীরা আমার কাছে নৃত্য শিক্ষা পেয়ে নিজেরা সমাজের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে এবং উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কোন গ্লানি আর থাকে না বরং আনন্দে মন ভরে যায়। আপনারা এতদিন যেমন আমার পাশে ছিলেন তেমনি সকল মানুষকে, সকল অভিভাবককে অনুরোধ করব, আমাদের আগামী দিনেও যেন আপনাদের পাশে পাই এবং সাফলতার সাথে সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ পালন করতে পারি।

সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় ছিলেন ‘রূপ ভারতী’র অধ্যক্ষ নৃত্যশ্রী কেকা চট্টোপাধ্যায়, কোরিওগ্রাফার ডঃ সূর্যাণী চ্যাটার্জ্জী, সহযোগিতায় ছিলেন স্বর্ণালি মিত্র এবং অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সঞ্চয় সরকার।

Related posts

Leave a Comment