December 5, 2025
দেশ

মায়াপুর ইসকনে গীতা জয়ন্তীর আন্তর্জাতিক উৎসবে রেকর্ড ভিড়— সপ্তাহজুড়ে আধ্যাত্মিক আবহে প্লাবিত পবিত্র ধাম

মায়াপুর, ২ ডিসেম্বর— শীতের হিমেল হাওয়া শুরু হতেই ভক্ত-পর্যটকদের ঢল নেমেছে মায়াপুরে। গীতা জয়ন্তী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী উৎসবে ইসকন হেডকোয়ার্টার কার্যত ভাসছে দেশ-বিদেশের মানুষের ভিড়ে। ইসকনের নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা ছ’দিনের এই আন্তর্জাতিক উৎসবে অন্তত তিন লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকের আগমন ঘটেছে পবিত্র মায়াপুরধামে।ইসকন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুধু ভারত থেকেই নয়, আমেরিকা, রাশিয়া, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন এই উৎসবে। ইসকনের পিআরও রসিক গৌরাঙ্গ দাস জানান, আগে থেকে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন প্রায় ১০ হাজার যুবক-যুবতী, তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছেন উৎসবে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়—‘ওয়াক-ইন’ দর্শনার্থীদের ভিড়।

কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অনিয়ন্ত্রিত ভিড় ইসকনের যাবতীয় পূর্ববর্তী রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছে।সারাদিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান—গীতা যজ্ঞ, কীর্তন-ভজন, গীতা পাঠ, পুজো এবং আধ্যাত্মিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ ভক্তদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকদেরও আকর্ষণ করেছে। ইসকনের নির্মীয়মাণ ‘টেম্পল অব দ্য ভেদিক প্ল্যানেটোরিয়াম’-এর অভ্যন্তর পরিদর্শনের সুযোগও উৎসবের কৌতূহল আরও বাড়িয়েছে সাধারণের মধ্যে।শীত পড়তেই বেড়াতে আসা নানা প্রান্তের মানুষ মায়াপুরে ভিড় জমিয়েছেন। তাঁদের অনেকে ইসকনের ভক্ত নন। কিন্তু গীতা জয়ন্তীর আবহ—আলো, সঙ্গীত, কীর্তন, শান্ত আধ্যাত্মিক পরিবেশ—সব মিলিয়ে সাধারণ পর্যটকরাও টেনে এসেছেন এই আন্তর্জাতিক আধ্যাত্মিক মিলনমেলায়।মায়াপুরের অন্যতম আকর্ষণ নদীপথ। জলঙ্গী, ভাগীরথী এবং গঙ্গার সঙ্গমের কাছে অবস্থিত হওয়ায় নৌকাভ্রমণ পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।

বিকেলের মোলায়েম আলোয় নদীপথে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই উৎসবকে এনে দিয়েছে অন্য মাত্রা।গীতা জয়ন্তীর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘কুরুক্ষেত্র সমরাঙ্গনে হতাশাগ্রস্ত অর্জুনকে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ যে জ্ঞান দান করেছিলেন, সেই কথোপকথনই ভগবদগীতা। মানব ধর্মতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত পাঠ হিসেবেই গীতাকে মানা হয়। প্রায় ৫১৫৮ বছর আগে অর্জুনের প্রতি সেই দিব্য জ্ঞানদান স্মরণ করে প্রতিবছর পালিত হয় গীতা জয়ন্তী।’ইসকনের দাবি, এ বছরের নজিরবিহীন ভিড় প্রমাণ করে গীতা জয়ন্তীর জনপ্রিয়তা আর শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসবের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই— এটি পরিণত হয়েছে এক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলায়। শীতের শুরুতেই যার আমেজে মায়াপুর ভরে উঠেছে দেশ-বিদেশের মানুষে।

Related posts

Leave a Comment