রাজ্য সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য
স্থান: তাজ বেঙ্গল, কলকাতা
তারিখ: ১০ জুন, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রীর সেবা, সুশাসন, সবার বিশ্বাস ও সবার বিকাশের মন্ত্রে ১১ বছর আমরা পেরিয়ে এসেছি। গতকাল আমাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জেপি নাড্ডা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সূচনা করেন। আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র যাদব।
বাংলায় প্রায়শই শোনা যায় বাংলার টাকা নাকি বঞ্চিত করা হচ্ছে। তৃণমূলকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় আমাদের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। আপনারা জানেন যে রাজস্ব সংগ্রহ হয় তার একটা অংশ রাজ্যে ফেরত আসে। UPA 1 এ রাজ্যকে ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল ১০ বছরে। আর মোদিজির আমলে ১১ বছরে ৫.২৪ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৪ গুণ বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। UPA আমলে গ্র্যান্ড ইন এইড পেয়েছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বিজেপির শাসনকালে পেয়েছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা।
জাতীয় সড়কে বিপুল উন্নতি করা হয়েছে।- খড়গপুর শিলিগুড়ি ইকনমিক করিডোর তৈরি হয়েছে, ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২০ কিমি গ্রিন ফিল্ড রাস্তা তৈরি হবে ২০২৭ সালের মধ্যে। ১৪-২১ সালে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ১ হাজার কিমি রাস্তা তৈরি হয়েছে।
১৩০০ কিমি নতুন রেল ট্রাক তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ৬১ রেলওয়ে প্রজেক্ট আটকে রয়েছে রাজ্য সরকারের জমি জটের কারণে। ৩০০ কোটি ব্যয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, ৪০০ কোটি কলকাতা বিমানবন্দর, ৭০০ কোটি অন্ডাল বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। ১৫৫০ কোটি বাগডোগরা বিমানবন্দরকে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ময়ূরাক্ষী সেচ ১৩০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । কিন্তু বৈরিতার জন্য সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। মুফত বিজলী ঘর যোজনার ভর্তুকি পাওয়া যাচ্ছে না।। সোলার প্রকল্পের লাভ পাওয়া যাচ্ছে না।
আসলে উন্নয়ন তখনই সম্ভব যখন আইন শৃঙ্খলা ঠিক থাকে। পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত নাগরিক বাংলাদেশের হাসিনা হাটাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে। ইন্টারন্যাশনাল কর্মী একমাত্র তৃণমূলের দেখা যায়। মুর্শিদাবাদের মত পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কলকাতার রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে, লন্ডন হতে গিয়ে ঢাকা হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এভাবে আর বেশিদিন চলবে না। ২০২৬ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে এবং মোদিজির উন্নয়নের মডেল হবে পশ্চিমবঙ্গের মডেল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র সিং যাদবের বক্তব্য
আমি যখনই কলকাতা আসি, আমার খুব আনন্দ হয়। কারণ কলকাতায় এলেই আমার এটা অনুভব হয়। এই ভূমিকে প্রণাম করতে ইচ্ছে করে। কারণ পশ্চিমবঙ্গ আধুনিক ভারতের শিক্ষা, সংস্কার, সাহিত্য, রাষ্ট্রবাদের ভূমি। বাংলার ভূমি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নেতাজি, শ্যামাপ্রসাদার মত মহাপুরুষের কর্মভূমি। স্বাধীনতার আগে বাংলা ছিল দেশের জন্য প্রেরণা। বাংলার সাহিত্য ও শিল্প বরাবরই এগিয়ে ছিল। স্বাধীনতার পরেও সত্যজিৎ রায়ের মত বড় পরিচালক এসেছেন। আজও আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং স্তোত্র এর জন্ম বাংলায়। এক সময় বলা হত what Bengal thinks today, India thinks tomorrow। কিন্তু এখন বাংলার পরিস্থিতি দেখে দুঃখ লাগে। কোনও এমন ৬ মাস যায় না যেখানে মহিলাদের উপর অত্যাচারের কথা জানতে পারা যায় না।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ঘটনা ঘটল। যদি মমতার শাসনকালের কথা লেখা হয় তাহলে কালো অক্ষরে লেখা হবে সন্দেশখালির ঘটনার কথা। যে বাংলার উচ্চতার শিখর ছুঁয়েছিল সেই বাংলায় আজ শিক্ষার কথা জিজ্ঞেস করলে দেখা যাবে তৃণমূলের আমলে এসএসসির চাকরিতে সবথেকে বড় দুর্নীতি হয়েছে এবং ২৬ হাজার চাকরি চুরি হয়েছে। ক্যাগে এর রিপোর্টে টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। এই টাকা কোথায় গেল? কারা লুটল? সত্যি বলতে কি আমার যতজন বাংলার বন্ধু আছেন দেশের যে প্রান্তেই দেখা হোক না কেন, তাঁরা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে সবথেকে বেশি ব্রেন ড্রেন হয়েছে। এর কারণ তৃণমূলের মাফিয়াগিরি, সরকারের জমি নীতি এবং অ্যান্টি বিজনেস মানসিকতা।
মহিলাদের সুরক্ষা হোক বা মালদা মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা, স্কুলের শিক্ষা হোক বা পরিযায়ী শ্রমিক হোক বা আয়ুষ্মান ভারত লাগু করতে না দেওয়া। পিএম জন মন যোজনা লাগু হতে না দেওয়া। পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সমতল সব জায়গায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যবহার করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার বিগত ১১ বছরে সুশাসন করেছে। এর আগে ভারত বিশ্বের ৫ টি টালমাটাল অর্থনীতির দেশের মধ্যে একটি ছিল। সেই আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করে আজ ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতি। আজ আমাদের বাংলার এমন পরিস্থিতি যে এই রাজ্যের দারিদ্র্যের কোনও সীমা নেই আর অপরদিকে দেশের দারিদ্র কমছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে জন বিশ্বাস বিলের মত বিল এনেছে।
১১ বছরে গভর্নেন্স এর দুর্দশা থেকে সুশাসনে বদলে দিয়েছি। মোদির শাসন কালে দেশ দারিদ্র্য মুক্ত হয়েছে। আপনারা দেখেছেন AIMS, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমি যখন আশির দশকে আসতাম, মেট্রো দেখতাম। এখন মেট্রোর সম্প্রসারণ হচ্ছে না। সবদিক থেকে পরিবহনকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। ১১ বছর আগে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আমরা বহু অস্ত্র আমদানি করতাম। এখন রপ্তানি করি। এটা ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগ হয়েছে। কিন্তু বাংলার সরকার গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল এডুকেশনে কি করেছে? বিজেপি সরকারের আমলে ৫০০ বছরের বিবাদের নিষ্পত্তি হয়েছে- রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
৩৭০ ধারা বিলুপ্তির মাধ্যমে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে সম্মান জানিয়েছি যিনি এর জন্য প্রাণ দিয়েছেন। যে ইউপিএ সরকারকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করতেন তখন জঙ্গিরা এসে মানুষকে মেরে ফিরে নিরাপদে ফিরে যেত। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি যে কেউ যদি আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি করে, হামলা করে তাহলে তার ঘরে ঢুকে তাকে মারা হবে।।
এই যাত্রা উন্নয়নশীল ভারত থেকে বিকশিত ভারতের যাত্রা। নিউ আলিপুরদুয়ার, ডেডিকেটেড ফ্রেত করিডোর, সিটি গ্যাস সিস্টেম, রাস্তা, পরিবহন, সব ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। বাংলার বিকাশের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছেন মোদি জি। সেই রোডম্যাপকে বাস্তবায়িত করার জন্য রাজ্য সরকারকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে। শুধু সংকীর্ণ রাজনীতি, মহিলাদের উপর অত্যাচার, কুশাসন এগুলি করলে চলবে না। ১১ বছরে প্রমাণিত হয়েছে মোদি হ্যায় তো মুমকিন হয়।
আমাদের এমন এক দেশ চাই যেখানে আতংকবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি রাখে, মহিলাদের এগিয়ে দেয়। আমাদের ডিফেন্স সিস্টেমে ৩০% এক্সপোর্ট বেড়েছে। কার্বন এমিসন কম করার ক্ষেত্রে ৯ বছর আগেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। ১১ বছরের কাজের ডিজিটাল ট্র্যাকিং করা সম্ভব।
আপনারা জানেন ২১ জুন যোগ দিবস। বাংলার মনীষীরা ভারতের যোগার পুনর্জাগরণে ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন। আমাদের সংকল্প হল আগামী দিনে মোদির বিকাশের সঙ্গে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।