মুর্শিদাবাদ: বহরমপুরে এবার বর্ষবরণ হল নতুন আঙ্গিকে। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক কারণেই মুর্শিদাবাদ জেলা শশাঙ্কময়। কারণ প্রাচীন ভারতের হিন্দু বাঙালি রাজা শশাঙ্কের রাজধানী এই জেলারই কর্ণসুবর্ণ গ্রামে। এই গ্রাম বর্তমান বহরমপুরের অদূরে। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধের বোধনে এবার সেই জেলা নতুনভাবে হল শশাঙ্কময়। ‘মহারাজা শশাঙ্ক স্মৃতি মঞ্চ’-র ব্যবস্থাপনায় বহরমপুরের খাগড়া সৈদাবাদ কপিলের মাঠের প্রাচীন শিবমন্দিরকে কেন্দ্র করে বঙ্গাধিপতি শশাঙ্ক মহারাজ এবং বঙ্গাব্দ বিষয়ক একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হল গত পয়লা বৈশাখ। এই শোভাযাত্রায় শিল্পী শীর্ষ আচার্য তাঁর নিজের হাতে আঁকা শশাঙ্কের ছবি নিয়ে পথ পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করলেন। সঙ্গে পা মেলালেন রাষ্ট্রবোধ-সম্পন্ন আরো অনেক মানুষ।
কর্ণসুবর্ণ গ্রামে রয়েছে শশাঙ্কের প্রাচীন রাজধানীর ভগ্নাবশেষ। বহু অজানা ইতিহাসের সাক্ষী এই কর্ণসুবর্ণ। শশাঙ্ক-স্মরণ সেই জেলার মানুষ কীভাবে করেন, এবার তার উপর পুরো রাজ্যের নজর ছিল। কারণ সারা রাজ্যে ইদানীং শশাঙ্ক নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে রাজ্যের মানুষ দাবী তুলেছেন, প্রাচীন কর্ণসুবর্ণের নামে মুর্শিদাবাদ জেলার নামকরণ হোক। এমনকি বহরমপুরে গঙ্গানদীর উপর নির্মিত ব্রীজের নামও শশাঙ্কের নামে হোক, এটাই স্থানীয় মানুষের দাবী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এদিনের শোভাযাত্রা এক নতুন মোড় নেয়।
শশাঙ্কের প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে শীর্ষ আচার্যকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, মহারাজা শশাঙ্ককে আমি একজন ‘বাঙালি আইকন’ হিসেবে দেখছি। চিন্তাভাবনাটা আসার উদ্দেশ্য – আমি নিজেই মুর্শিদাবাদের ছেলে, সেইজন্যে মহারাজা শশাঙ্কের সাম্রাজ্যের কেন্দ্র অর্থাৎ তার রাজধানী আমাদের কর্ণসুবর্ণে, অতএব আমার একজন শিল্পী হিসেবে মনে হয়েছে শশাঙ্কের ছবি বা ভাস্কর্য যা এতদিন ছিল না, সেটা সমাজকে দেওয়া আমার কর্তব্য হবে, এবং আগামী দিনে যাতে বাঙালি এই ছবি উপলক্ষ করে মহারাজা শশাঙ্কের সেই গৌরবগাথাকে তুলে ধরতে পারে; তার ভিত্তি রচনা করা উচিত। গুপ্ত যুগের সেই সময়কার সমস্ত রকমের অলংকার, আভূষণ এবং সিংহাসন ইত্যাদির যে বর্ণনা পাওয়া যায় সেটাকে মাথায় রেখে অত্যন্ত ভাবে ঐতিহাসিকভাবে পারফেক্ট এমন ছবিই এঁকেছি। মানুষ তা গ্রহণ করলে আমাদের কাজ সার্থক হবে।
সম্প্রতি ‘দেশের মাটি’ নামক একটি বৌদ্ধিক গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয়, মহারাজ শশাঙ্ককে নিয়ে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মসূচী গ্রহণ করবে, এই সংগঠন তথ্য দিয়ে, ছবি এঁকে, ভাস্কর্য গড়ে এবং স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়ে তাদের সার্বিক সহায়তা করবে। তারই অঙ্গ হিসাবে ‘দেশের মাটি’ গোষ্ঠী নতুন বঙ্গাব্দের প্রাক্কালে ‘সংস্কার ভারতী’, ‘EZCC’, ‘সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদ’, ‘বাংলা আবার’ প্রভৃতি সংগঠনের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। সেই উদ্দেশ্যেই ‘মহারাজা শশাঙ্ক স্মৃতি মঞ্চ’-এর অনুষ্ঠানে ‘দেশের মাটি শিল্প সুষমা’ গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শীর্ষ আচার্য এই সংগঠনের জন্য ছবি আঁকেন। সংগঠনের এই উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ‘দেশের মাটি’ গোষ্ঠীর পক্ষে মিলন খামারিয়া এবং ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।
previous post