টেকসই উন্নয়নের জন্য নদী ও জলসম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর সেগুলির পুনর্জীবন জাতীয় ‘নমামি গঙ্গে’ মিশনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নদী পুনর্জীবন ও জল সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকার মাধ্যমে এনএমসিজি এখন বৈশ্বিক জল সংলাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।এই বছর স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ইনস্টিটিউট (SIWI) আয়োজিত স্টকহোম ওয়ার্ল্ড ওয়াটার উইক-এ ভারতের অংশগ্রহণ বৈশ্বিক জল সমস্যার সমাধানে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা তুলে ধরেছে।
সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল “রিভার সিটিজ রিইমাজিনড: ক্লাইমেট-স্মার্ট অ্যান্ড বেসিন-সেন্ট্রিক আরবান ডেভেলপমেন্ট” শীর্ষক সেশন, যা যৌথভাবে পরিচালনা করে এনএমসিজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আরবান অ্যাফেয়ার্স (NIUA) ও জিআইজেড (GIZ)।সেশনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নদীকেন্দ্রিক উন্নয়নই শহরকে টেকসই ও স্থিতিশীল করার মূল চাবিকাঠি।এনএমসিজি-র মহাপরিচালক রাজীব কুমার মিত্তল জানান, নামামি গঙ্গে মিশন ভারতে নদী পুনর্জীবনে ঐতিহাসিক নীতি পরিবর্তনের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
ইতিমধ্যেই ৪০,০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যার মাধ্যমে গঙ্গা ও এর উপনদীগুলোকে আগের মতো নির্মল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সমন্বয়ে নদীগুলোকে আবারও জীবনের ধারক হিসেবে পুনর্জীবিত করা সম্ভব—নামামি গঙ্গে তার জীবন্ত উদাহরণ।
মিশনের আওতায় হাইব্রিড অ্যানুইটি মডেল ভিত্তিক এসটিপি, সৌরশক্তিচালিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ও সয়েল বায়োটেকনোলজির মতো উদ্ভাবনী প্রকল্প বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপন করছে।তিনি আরও জানান, এই মিশন এখন এক গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যার দৃশ্যমান ইতিবাচক ফলাফল মিলছে। বিশ্বব্যাংক, জিআইজেড, সি-গঙ্গে, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কের সহযোগিতা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করেছে।বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণের সমাধান নিহিত আছে নদী অববাহিকার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায়।
ভারতের নামামি গঙ্গে মিশনকে উদাহরণ হিসেবে অন্য দেশগুলির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জৈব কৃষি, জলাভূমি সংরক্ষণ ও ক্লাইমেট-স্মার্ট আরবান ডেভেলপমেন্ট—এসবই এই মিশনকে বৈশ্বিক অনুপ্রেরণায় পরিণত করেছে।সম্মেলনে জোর দিয়ে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই পরিবেশগত ভারসাম্য ও জল নিরাপত্তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল রিভার সিটিজ অ্যালায়েন্স-এর মতো প্ল্যাটফর্ম জলবায়ু অভিযোজন ও টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে।
শেষ বার্তায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, শহরগুলো কেবল ভোক্তা নয়, বরং নদী অববাহিকার অভিভাবক হতে হবে। সীমান্ত পেরিয়ে একসঙ্গে কাজ করলে নদীগুলোকে শুধু রক্ষা নয়, আরও সমৃদ্ধও করা সম্ভব। এটাই আগামী প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রকৃত ভিত্তি।
