অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি নিয়ে গত আট বছরে উত্তরপ্রদেশ সরকার ব্যাপকভাবে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির সম্প্রসারণ করেছে। এর ফলে অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধীর সনাক্তকরণ এবং আদালতে শক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।
একই সঙ্গে রাজ্যে প্রথমবারের মতো গড়ে উঠেছে ফরেন্সিক ইনস্টিটিউট, যা একদিকে যেমন যুবকদের নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে, তেমনি বিচারব্যবস্থাকে করেছে আরও শক্তিশালী। বিশেষত সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় এই প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে এই ইনস্টিটিউট রাজ্যের অন্যতম প্রধান ফরেন্সিক শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। এখানে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ অফিসার, তদন্তকারী কর্মী ও বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
২০১৭ সালের আগে রাজ্যে মাত্র চারটি ফরেন্সিক ল্যাব ছিল—লখনউ, বারাণসী, আগ্রা ও গাজিয়াবাদে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে আরও আটটি ল্যাব গড়ে ওঠে ঝাঁসি, প্রয়াগরাজ, গোরখপুর, কানপুর, বেয়ারেলি, গোঁদা, আলিগড় ও মোরাদাবাদে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ল্যাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২-তে। এর ফলে ফরেন্সিক রিপোর্ট দ্রুত হাতে পাচ্ছে পুলিশ ও আদালত, যা আগে সীমিত সুযোগের কারণে বিলম্বিত হতো।
এবার নতুনভাবে আরও ছ’টি ফরেন্সিক ল্যাব তৈরি হচ্ছে অযোধ্যা, বস্তি, বান্দা, আজমগড়, মির্জাপুর ও সাহারানপুরে। এগুলো চালু হলে অপরাধ দমন ও প্রমাণ সংগ্রহ আরও শক্তিশালী হবে।
উত্তরপ্রদেশের ফরেন্সিক কাঠামো ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছে ন্যাশনাল অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমের (NAFIS) সঙ্গে। উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে আপডেট করা হয়েছে স্টেট ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো ও এর নেটওয়ার্ক। ফলে STF, ATS এবং GRP ইউনিটগুলোও এই সুবিধার আওতায় এসেছে। ইতিমধ্যেই ৪.১৪ লক্ষাধিক আঙুলের ছাপ ডিজিটাল আকারে সংরক্ষিত হয়েছে। অপরাধী শনাক্তকরণ বা অজ্ঞাত মৃতদেহের পরিচয় নির্ধারণ এখন অনেক দ্রুত ও কার্যকর হয়েছে।
নতুন তিনটি আইন—ভারতীয় দণ্ডবিধি (BNS), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS) ও ভারতীয় সাক্ষ্য আইন (BSA)-২০২৩ কার্যকর করতে ল্যাবে নতুন বিজ্ঞানী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তদন্ত, প্রমাণ সংগ্রহ, ল্যাব বিশ্লেষণ ও বিট-ভিত্তিক পুলিশিংয়ে গতি এসেছে।
এরই মধ্যে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উদ্বোধন করবেন উত্তরপ্রদেশ স্টেট ইনস্টিটিউট অফ ফরেন্সিক সায়েন্সেস (UPSIFS)-এর তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সাইবার অপরাধ, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো, ফরেন্সিক বিজ্ঞানের কৌশলগত দিক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে গভীর আলোচনা হবে এই সম্মেলনে। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা মত বিনিময় করবেন ফরেন্সিক বিজ্ঞান, অপরাধতত্ত্ব ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে।
