ষাট বছরেরও বেশি সময়ের উজ্জ্বল সেবা শেষে ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আইএএফ) মেরুদণ্ড বলে খ্যাত কিংবদন্তি মিগ-২১ এবার বিদায় নিতে চলেছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর চণ্ডীগড় বিমান ঘাঁটিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই আইকনিক সুপারসনিক জেটের অবসরকে নথিভুক্ত করা হবে। একসময় আকাশে বজ্রধ্বনির মতো গর্জন করে দেশের প্রতিরক্ষায় অনন্য সাহস ও শক্তির পরিচয় দেওয়া মিগ-২১ চিরকালই এয়ার ওয়ারিয়রদের এবং সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।
সম্মানের সঙ্গে অবসর নিতে যাওয়া মিগ-২১-এর গৌরবময় উত্তরাধিকার বহন করবে দেশীয়ভাবে নির্মিত তেজস এলসিএ মার্ক 1A—যা ভারতের আত্মনির্ভরতার প্রতীক এবং দেশের বিমান চলাচল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
১৯৬৩ সালে আইএএফ-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া মিগ-২১ ছিল ভারতের প্রথম সুপারসনিক ফাইটার জেট। ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতীকী বিদায় হিসেবে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং সম্প্রতি রাজস্থানের বিকানেরের নাল বিমান ঘাঁটি থেকে এই বিমানের শেষ অপারেশনাল ফ্লাইট পরিচালনা করেন।
রাশিয়ান উত্সের এই যুদ্ধবিমান নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার মিগ-২১-এর সঙ্গে প্রথম অভিজ্ঞতা ১৯৮৫ সালে, যখন আমি তেজপুরে টাইপ-৭৭ ভ্যারিয়েন্ট উড়াই। এটি ছিল এক দারুণ অভিজ্ঞতা—অত্যন্ত দ্রুতগামী, সহজ নকশা, তবে শুরুর দিকে কিছুটা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। উড়ানোর জন্য এটি অসাধারণ একটি বিমান। যারা এটি চালানোর সুযোগ পেয়েছেন, সবার কাছেই এটি ভীষণভাবে প্রিয় হয়ে থাকবে।”
মিগ-২১-এর উত্তরসূরি হিসেবে তেজস নিয়ে তিনি আরও বলেন, “তেজস মূলত মিগ-২১-এর বিকল্প হিসেবে পরিকল্পিত হয়েছিল। এর নকশায় মিগ-২১-এর পাশাপাশি মিরাজ থেকেও অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। তেজস মিগ-২১-কে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন করবে, তবে এর আরও উন্নতি প্রয়োজন। নতুন অস্ত্র সংযোজন করতে হবে। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ভূমিকায় তেজস যথেষ্ট উপযুক্ত। ইতিমধ্যেই ৮৩টি বিমানের চুক্তি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও আসবে। ধীরে ধীরে তেজস বহরে মিগ-২১-এর ভূমিকা পূরণ করবে।”
একই সুরে আইএএফ-এর মুখপাত্র উইং কমান্ডার জয়দীপ সিং বলেন, “১৯৬৫ সালের যুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালের সংঘাতে মিগ-২১ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষত ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার গভর্নর হাউসে আঘাত হানার ঘটনাটি ঐতিহাসিক। পরের দিন গভর্নর পদত্যাগ করেন এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে, ৯৩,০০০ সেনা অস্ত্র সমর্পণ করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে ‘অপারেশন সাফেদ সাগর’-এও এটি অংশ নেয় এবং অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানি আটলান্টিক বিমানকে ভূপাতিত করে। ২০১৯ সালেও মিগ-২১ আবারও শিরোনামে আসে পাকিস্তানি এফ-১৬ ভূপাতিত করার মাধ্যমে।”

