November 2, 2025
খেলা দেশ

ঐতিহাসিক জয়, মেয়েদের বিশ্বকাপে ভারতের হাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা

জয়ের মুহূর্তে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল।

মুম্বই, ২ নভেম্বর: এক মুহূর্তেই বদলে গেল ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস। ঠিক যেমন ১৯৮৩-য় কপিল দেবের নেতৃত্বে লর্ডসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল, রবিবার ঠিক মধ্যরাতে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আবারও সেই চিত্রই যেন ফিরে এল। তবে এ বার নায়িকা ভারতীয় মহিলারা। হরমনপ্রীত কৌর যখন নাদিন দে ক্লার্কের ক্যাচটি তালুবন্দি করলেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে গেল, মহিলাদের বিশ্বকাপের শিরোপা এ বার ভারতের।

১৯৮৩ দেখিয়েছিল ভারতও পারে। আর ২০২৫ দেখিয়ে দিল, ভারতীয় মহিলারা বিশ্বমঞ্চে খেলাটি ‘নিজেদের’ করে নিতে পারে। শেফালি বর্মা, দীপ্তি শর্মা, স্মৃতি মন্ধানা, হরমনপ্রীত— এঁরাই আজকের দিনের সেই নায়িকা, যাঁরা আগামী প্রজন্মের মেয়েদের স্বপ্ন দেখতে শেখাবেন। যেমন একদিন কপিল, গাওস্কর, অমরনাথরা শিখিয়েছিলেন হাজারো ছেলেকে।

ঝড়ের গতিতে ভারত— শেফালির ব্যাটে, দীপ্তির অলরাউন্ড ম্যাজিক
নকআউটের আগে চোটের কারণে বাদ পড়া এক ক্রিকেটারের জায়গায় দলে ঢুকেছিলেন শেফালি। কিন্তু বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো মঞ্চে নিজের সেরা একদিন বেছে নিলেন তিনি। ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, তার পর বল হাতে নেমে দুই গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধেই প্রধান ভূমিকায় শেফালি বর্মা।

তাঁর সঙ্গে স্মৃতি মান্ধানার জুটি ভারতকে ম্যাচের শুরুতেই ছুটিয়ে দিয়েছিল। বৃষ্টির জন্য দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে ধৈর্য ধরা দর্শকরা পুরস্কার পেলেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ছ’ওভারে ভারত ৫০, ১৮ ওভারের মাথায় ১০৪!

৪৫ রানে আউট হন স্মৃতি। কিন্তু শেফালির ব্যাট চলতেই থাকে। ৪৯ বলে পঞ্চম অর্ধশতরান, জুলাই ২০২২-এর পর এই প্রথম। ৫৭-তে জীবনদান পেয়ে শেফালি শতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন, এমন সময় আয়াবোঙ্গা খাবা তাঁর ইনিংস খতম করে দেন। ৭৮ বলে ৮৭ রান, সাতটি চার, দুটি ছয়।

জেমিমা (২৪) ও হরমনপ্রীত (২০) কিছু রান যোগ করলেও মাঝেমধ্যে রানের গতি কমেছিল। সেখানে দলের ভরসা হয়ে ওঠেন দীপ্তি শর্মা, যিনি ৫৮ রানের প্রয়োজনীয় ইনিংস এবং পরে বল হাতে ৫টি উইকেট। রিচা ঘোষের ২৪ বলে ৩৪ রান শেষে ভারতকে তুলে দেয় ২৯৮/৬-এ।

ওলভর্টের শতরানও থামাতে পারল না ভারতীয় বোলারদের দাপট
ব্যাটিং করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন লরা ওলভর্ট। সেমিফাইনালে তাঁর ১৬৯-এর পর এ দিনও শতরান— ১০১। কিন্তু ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে একা তিনি কতক্ষণ দাঁড়াবেন?

তাজমিন ব্রিটসকে ফেরান অমনজ্যোত কৌরের সরাসরি থ্রো। এরপর শ্রী চরাণি বশকে এলবিডব্লিউ— দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ৬২/২।

মধ্যের ওভারে সুনে লুস (২৫) সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন ওলভর্ট। তখনই অধিনায়কের চমক— বল হাতে শেফালি! আর প্রথম স্পেলেই লুসকে সহজ রিটার্ন ক্যাচে ফেরান তিনি। পরে মাত্র ৪ রানে মারিজান কাপকেও আউট করেন। স্টেডিয়ামে দর্শকদের গর্জন তখন আকাশ ফাটাচ্ছে।

এদিকে ওলভর্ট একা লড়াই চালিয়ে শতরানে পৌঁছলেও প্রয়োজনের সময়ে দীপ্তি আবারও ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। প্রথমে ওলভর্ট, তার পর তিন বলের ব্যবধানে ক্লোয়ি ট্রায়নকে ফেরান তিনি। সেখান থেকে ধস নামে— ২২১/৬ থেকে মুহূর্তে ২২১/৮। শেষমেশ দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট ২৪৬। ভারত জিতে যায় ৫২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ২৯৮/৬ (শেফালি ৮৭, দীপ্তি ৫৮, রিচা ৩৪; খাবা ৩/৫৮)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ (ওলভর্ট ১০১, ডার্কসেন ৩৫; দীপ্তি ৫/৩৯, শেফালি ২/৩৬)

Related posts

Leave a Comment