ইংরেজি নববর্ষ বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যার ও লুটপাটে কোনো বিরাম নেই। বাংলাদেশে গত ১৫ দিনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হয়রানি, হিংস্রতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদ্বেগজনক বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছে। এই ঘটনাগুলি ধর্মীয় নিপীড়নের একটি নিয়মতান্ত্রিক প্যাটার্ন তুলে ধরে। যা দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং অধিকার সম্পর্কে সমালোচনামূলক উদ্বেগ উত্থাপন করে।
৬ জানুয়ারি ২০২৫, ঝালকাঠি জেলার বাউকাঠি বাজারের ২৬ বছর বয়সী মোবাইল ব্যবসায়ী সুদেব হালদারকে উগ্র চরমপন্থীরা নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর গলা কেটে ফেলা হয় এবং মৃতদেহ রামপুর ব্রিজের কাছে ফেলে দেয়। এই জঘন্য কাজটি দেশে হিন্দুদের ওপর একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আরেকটি উদ্বেগজনক ঘটনা, ৭ জানুয়ারি ২০২৫, চট্টগ্রামের হাটহাজারের চৌধুরী হাটে মা মগদেশ্বরী মন্দির থেকে দুর্বৃত্তরা পিতলের হাঁড়ি, দানের ঝুড়ি এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। ধর্মীয় সহিংসতা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে এবং বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের মতো সংস্থাগুলি এই ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
৮ জানুয়ারি ২০২৫, চন্দন মহাজন, চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার একজন শিক্ষক, তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে চরমপন্থীদের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই ঘটনা দেশে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকে নির্দেশ করে। একই রাতে বাগেরহাট জেলার বিষপুরে কট্টরপন্থী উগ্রবাদীরা সনাতন হিন্দুদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়া আক্রান্তরা এখন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছাড়াই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
উপরন্তু, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, চোরেরা রাজশাহীর পবা উপজেলায় দুটি মন্দির ভেঙে পূজার সামগ্রী চুরি করে এমনকি একটি পবিত্র নিম গাছ কেটে ফেলে। এই ধরনের পুনরাবৃত্ত হামলা হিন্দু ধর্মীয়স্থানের পবিত্রতা এবং সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার প্রতি অবজ্ঞা নির্দেশ করে।
১০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে, দুর্বৃত্তরা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ঐতিহাসিক ভবতারিণী কালী মন্দিরের অপমান করে প্রতিমা, পূজার উপকরণ এবং সোনার অলঙ্কার চুরি করে। এই ধরনের অপবিত্রতা সম্প্রদায়কে গভীরভাবে আঘাত ও ভয়ের মধ্যে ফেলেছে। ওই দিনই অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক দিলীপ কুমার রায়কে নেত্রকোনা জেলার বড়বাজারে নিজ বাড়িতে মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্নসহ মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ উগ্র চরমপন্থীদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। যা হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্বলতাকে আরও তুলে ধরেছে।
ঢাকায়, ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি রাতে, মুসলিম উগ্রবাদীরা রমনা কালী মন্দিরে পাঁচ দিনের নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানকে ব্যাহত করে। এই আইনটি এমনকি দেশের রাজধানীতেও ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ পায়৷ এদিকে ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে, সিলেট জেলায়, মিজানুর রহমান আজহারীর নেতৃত্বে তিন দিনের ওয়াজ মাহফিলের সময়, নিকটবর্তী একটি শিব মন্দিরকে জোরপূর্বক কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল দৃশ্যমানতা এড়ানোর জন্য। যা হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতির নির্লজ্জ দমনের প্রতীক ও চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়। ঘটনাগুলি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু আক্রমণের একটি উদ্বেগজনক প্যাটার্ন প্রকাশ করে, খুন এবং চুরি থেকে শুরু করে জোরপূর্বক পদত্যাগ এবং অগ্নিসংযোগ। এই কাজগুলো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দমন করার একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নীরবতা বিষয়টিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অরক্ষিত এবং গণতান্ত্রিক নিরাপত্তার মোহভঙ্গ করেছে। এই ঘটনাগুলি, বিশেষ করে ধর্মের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার অধিকারের ক্ষেত্রে গুরুতর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিনিধিত্ব করে।
এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য, নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি খুবই জরুরি:
১) অবিলম্বে পদক্ষেপ: এই জঘন্য অপরাধের অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার করা।
২) সংখ্যালঘুদের জন্য সুরক্ষা: ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংবেদনশীল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করুন।
৩) জবাবদিহিতা: তদন্ত করুন এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত কোন রাষ্ট্রীয় নেতাদের জবাবদিহি করুন।
৪) আন্তর্জাতিক মনোযোগ: বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান নিপীড়ন মোকাবেলার জন্য বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করুন।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ক্রমবর্ধমান হয়রানি একটি গুরুতর উদ্বেগ যা জরুরী মনোযোগ দাবি করে। সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ ছাড়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং মর্যাদা ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং মানবাধিকারের নীতিগুলিকে ক্ষুন্ন করে।
previous post