সংবাদ কলকাতা, ২৪ সেপ্টেম্বর — এক রাতের মুষলধারে বৃষ্টিতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে কলকাতা। শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দশজন। জলযট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পরিবহণে অচলাবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইও শুরু হয়েছে বিজেপি ও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নাগরিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে “চূড়ান্ত অদক্ষতার” অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “এক রাতের বৃষ্টিতেই কলকাতা ও সল্টলেক ডুবে গেল। আবহাওয়ার উন্নত পূর্বাভাস প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও কলকাতা ও বিধাননগরের মেয়রদের অবহেলা ও অদক্ষতার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সাতজন ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন — এটি শুধু অবহেলা নয়, অপরাধ।”
তৃণমূল অবশ্য বিজেপির সমালোচনাকে “রাজনীতি করার প্রচেষ্টা” বলে পাল্টা আক্রমণ করেছে। রাজ্য মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতা পুরসভা সক্রিয়ভাবে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজ করছেন। “বিজেপি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করছে। দিল্লি ও গুরগাঁওয়ে একই পরিস্থিতি হলে তারা নিশ্চুপ ছিল। আমরা এমন সংকটকে রাজনৈতিক রঙ দেওয়াকে নিন্দা করি,” বলেন তিনি।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নাগরিকদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে জানান, আর বৃষ্টি না হলে আগামী ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার মধ্যে জল নামতে পারে। শহরে ৩০০ মিমির বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, যার জেরে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, পাশাপাশি দুর্গাপুজোর বহু প্যান্ডেলও জলে ডুবে গেছে।
পরিস্থিতির কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবারের নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরেও জল ঢুকে পড়েছে।
পরিবহণে চরম প্রভাব
হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনের একাধিক রেলইয়ার্ড ও কেবিন জলে ডুবে গেছে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, পাশের বেসামরিক এলাকা থেকেও জল ঢুকে পড়ায় পাম্প চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বহু উপনগরীয় ট্রেন আংশিক বাতিল বা সংক্ষিপ্ত রুটে চালানো হচ্ছে। হজরদুয়ারি এক্সপ্রেস ও শিয়ালদহ-জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।
বিমান পরিষেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০টি ফ্লাইট বাতিল ও ৪২টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। যাত্রীদের জন্য বিমান সংস্থাগুলি সতর্কতা জারি করেছে।
রাস্তার অবস্থাও ছিল একইরকম। শহরের প্রধান প্রধান রাস্তায় জল জমে যান চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
সামনে আরও বৃষ্টি
আলিপুর আবহাওয়া দফতর সতর্ক করে জানিয়েছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে তৈরি নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্ত শক্তি বাড়াচ্ছে, যার জেরে আগামী কয়েক দিনে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আরও প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এক আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক বলেন, “গত রাতের বৃষ্টি মূলত নিম্নচাপ-সৃষ্ট মেঘফাটার কারণে হয়েছে। পরিস্থিতি এখনও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির অনুকূলে রয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যা দুর্গাপুজোর আগে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।”
এখনও পর্যন্ত জলে ডুবে থাকা শহর আরও বৃষ্টির আশঙ্কায় সন্ত্রস্ত, আর সেই সঙ্গে রাজনৈতিক তরজা পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলছে।
							previous post
						
						
					
