25 C
Kolkata
November 2, 2025
দেশ বিদেশ

গ্যারান্টি টার্গেটে পরিণত

গত সপ্তাহে পশ্চিমা কূটনীতি ও মস্কোর সামরিক হিসাবের মধ্যে বাড়তে থাকা ব্যবধান আরও স্পষ্ট হয়েছে। বেইজিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেন যদি তাঁর শর্তে শান্তি মেনে নেয়, তাহলে “টানেলের শেষে আলো” দেখা যেতে পারে।

কয়েকদিন পর ভ্লাদিভোস্তকে তিনি সব দ্বিধা দূরে সরিয়ে ঘোষণা করলেন, ইউক্রেনে পশ্চিমা বাহিনী মোতায়েন করা হলে তারা হবে “বৈধ লক্ষ্যবস্তু।” সীমিত খোলামেলা অবস্থান থেকে সরাসরি হুমকিতে যাওয়াই প্রমাণ করে—প্রতিটি নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রচেষ্টা রাশিয়ার অনড় অবস্থানে ভেঙে পড়ছে।প্যারিস সম্মেলন ছিল মিত্রশক্তিদের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ। এখানে ২৬টি দেশ ইউক্রেনকে নিরাপত্তা আশ্বাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যুদ্ধবিরতির পর বিমান, সমুদ্র ও স্থলবাহিনী মোতায়েন করা হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একে পুনরায় আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য প্রথম কার্যকরী ঢাল বলেছেন। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এটিকে কেবল প্রতিশ্রুতির বদলে বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কিয়েভের কাছে এটি প্রতীকী নয়, বরং বার্তা—যুদ্ধবিরতি ও শান্তির মাঝের দুর্বল সময়ে ইউক্রেন একা থাকবে না।কিন্তু পুতিন দ্রুতই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন।

তিনি সতর্ক করেন, যুদ্ধবিরতির পরও মোতায়েন করা বাহিনী হবে লক্ষ্যবস্তু। অর্থাৎ পশ্চিমা প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি তা ভেস্তে দিতে চাইছেন। মস্কোর অবস্থান পরিষ্কার: শান্তি আসবে না বিদেশি সেনা দিয়ে, বরং রাশিয়ার দখল মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই আসবে। এখানেই ওয়াশিংটন ও ইউরোপের মধ্যে বিভাজন প্রকট হয়। আমেরিকা মূলত সংলাপের মাধ্যমে মস্কোকে টেবিলে আনতে চাইছে, অন্যদিকে ইউরোপ সরাসরি ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

এই ব্যবধান ক্রেমলিনকে সুযোগ করে দেয় একপক্ষকে আরেকপক্ষের বিপরীতে খেলার। তারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে “গঠনমূলক” বলে প্রশংসা করছে, আবার ইউরোপের পদক্ষেপকে “উস্কানি” বলে সমালোচনা করছে। ইউক্রেনের সামনে হিসাবটা কঠিন: গ্যারান্টি ছাড়া যুদ্ধবিরতি মানে রাশিয়ার পক্ষে জমাট বাঁধা অবস্থা, আর গ্যারান্টিসহ যুদ্ধবিরতি মানে নতুন সংঘাতের ঝুঁকি।সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, শান্তির প্রচেষ্টাই অস্ত্রে পরিণত হচ্ছে।

নিরাপত্তা গ্যারান্টিকে বিতর্কিত করে রাশিয়া নিশ্চিত করছে, এমনকি যুদ্ধবিরতির কাঠামোটাই অনির্ভরযোগ্য। এখন মিত্ররা ঠিক করবে—হুমকি উপেক্ষা করে এগোবে নাকি প্রতিশ্রুতি নরম করবে মস্কোর সঙ্গে সংলাপ খোলা রাখতে। কোনো পথই দ্রুত স্বস্তি দিচ্ছে না। পরিষ্কার শুধু একটাই: যুদ্ধ এখন আর শুধু ভূখণ্ড নিয়ে নয়, বরং ইউরোপে নিরাপত্তার শর্ত ঠিক করার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়েই। আর এই লড়াই চলছে সমানতালে যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনীতির ময়দানে।

Related posts

Leave a Comment