28 C
Kolkata
April 18, 2025
দেশ

বিশ্বজনীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা

ভারতের কোম্পানিগুলিকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার অনুমতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে চিহ্নিত করে।অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকার র্যাচেল রিভসের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠক এই ধারণাকে নতুন গতি দিয়েছে।

এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে ভারত কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চাইছে তা নয়, বৈশ্বিক আর্থিক বাস্তুতন্ত্রে কৌশলগতভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।ভারতীয় সংস্থাগুলিকে বিদেশে তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমতি দেওয়া মূলধনের একটি শক্তিশালী নতুন উৎস উন্মুক্ত করতে পারে।লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ একটি পরিপক্ক এবং বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগকারী ভিত্তির অ্যাক্সেস সরবরাহ করে, যা ভারতীয় সংস্থাগুলিকে সম্প্রসারণ, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগের জন্য দীর্ঘমেয়াদী তহবিল সরবরাহ করতে পারে।শুধু মূলধনের চেয়েও বেশি, বৈশ্বিক তালিকাগুলি দৃশ্যমানতা, বর্ধিত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বৃহত্তর যাচাই-বাছাই নিয়ে আসে-যে কারণগুলি ভারতীয় সংস্থাগুলিকে তাদের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনের মান উন্নত করতে বাধ্য করতে পারে।এই অনুসন্ধানের সময়কাল তাৎপর্যপূর্ণ।ভারত যখন 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে চায়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার একটি স্বাভাবিক পদক্ষেপ হয়ে ওঠে।বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হওয়া ভারতীয় সংস্থাগুলিকে মূল্যায়ন এবং অপারেশনাল বেঞ্চমার্ক উভয় ক্ষেত্রেই আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সহায়তা করতে পারে।এটি বিশ্বের কাছে একটি শক্তিশালী সংকেত পাঠাবে যে ভারতীয় সংস্থাগুলি বড় লিগে খেলতে প্রস্তুত।

এটি ভারতীয় উদ্যোক্তাকে বিশ্বব্যাপী গতিশীল, স্বচ্ছ এবং বিকাশমুখী হিসাবে কীভাবে দেখা হয় তা পুনরায় কল্পনা করার জন্য একটি অপ-পার ট্যুনিটিও উপস্থাপন করে।এগুলি এমন গুণাবলী যা নির্ভরযোগ্য উদীয়মান বাজারের এক্সপোজার খুঁজছেন এমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সাথে দৃঢ়ভাবে অনুরণিত হয়।কিন্তু এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার চ্যালেঞ্জ ছাড়া নয়।ভারতকে তার নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামোর যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করতে হবে।মূলধন নিয়ন্ত্রণ, কর, প্রকাশের নিয়ম এবং বিনিয়োগকারী সুরক্ষা সম্পর্কিত বর্তমান আইনগুলি যুক্তরাজ্যের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য করতে হবে।মূলধন অপচয় রোধ করতে এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের যাতে অসুবিধায় না পড়তে হয় তা নিশ্চিত করার জন্যও সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকতে হবে।একই সঙ্গে ভারতের নিজস্ব পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার সঙ্গে এই পদক্ষেপের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

বিএসই এবং এনএসই-এর মতো প্রাক্তন পরিবর্তনগুলি গত দুই দশক ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং এগুলিকে অবশ্যই শক্তিশালী পরিকাঠামো, নিয়ন্ত্রণমূলক স্পষ্টতা এবং বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার মাধ্যমে সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।ভারত এমন পরিস্থিতি সহ্য করতে পারে না যেখানে উজ্জ্বলতম সংস্থাগুলি দেশীয় বাজারের গভীরতার ব্যয়ে বিদেশী তালিকা বেছে নেয়।বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনা করার মতো।ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে আরও গভীর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী এবং ভারত একটি স্বাভাবিক অংশীদার।

দুই দেশের মধ্যে একটি সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আর্থিক সহযোগিতার সাথে ভালভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে, যা এই ধরনের তালিকাগুলিকে বৃহত্তর সংহতকরণের দিকে একটি প্রতীকী এবং ব্যবহারিক উভয় পদক্ষেপে পরিণত করে।পরিশেষে, ভারতীয় সংস্থাগুলিকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করার অনুমতি দেওয়া কেবল একটি আর্থিক কৌশলের চেয়ে বেশি-এটি আস্থার ঘোষণা।এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের কর্পোরেট ক্ষেত্র বৈশ্বিক মান গ্রহণ করতে এবং বৃহত্তর মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।যদি চিন্তাভাবনা করে পরিচালনা করা হয়, তবে এটি সত্যিকারের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার দিকে ভারতের যাত্রায় একটি সংজ্ঞায়িত পদক্ষেপ হতে পারে।

Related posts

Leave a Comment