December 5, 2025
Featured

ব্রিগেডে গীতা পাঠ ঘিরে রাজনীতির আগুন, কিন্তু মায়াপুরে শুধুই আধ্যাত্মিকতার রেকর্ড ভিড়

নিজস্ব চিত্র

বিধানসভা ভোটের মুখে গীতা পাঠ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তাপমাত্রা চড়ে যাচ্ছে। অভিযোগ-প্রত্যাঘাতে গরম ব্রিগেডের কর্মসূচি। ঠিক তার উল্টো ছবি দেখা গেল নদিয়ার মায়াপুরে—গীতা জয়ন্তী উপলক্ষে শান্ত, অনাড়ম্বর অথচ নজিরবিহীন ভিড়।

৭ ডিসেম্বর ব্রিগেডের মাঠে পাঁচ লক্ষ মানুষের কণ্ঠে গীতা পাঠের ডাক দিয়েছে আয়োজকেরা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই তৃণমূল, বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ—‘গীতা পাঠ’-এর আড়ালে গেরুয়া শিবির ধর্মীয় মেরুকরণে নামছে। অনুষ্ঠান মঞ্চে সাদ্ধি রীতম্ভরা, আরএসএস-ঘনিষ্ঠ সন্ন্যাসী ও বহু গেরুয়া নেতার উপস্থিতির দিকে আঙুল উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, ভোটের আগে ধর্মকে হাতিয়ার করছে বিজেপি।

এদিকে সেই বিতর্কের পুরোপুরি উল্টো আবহ তৈরি হয়েছে মায়াপুরে ইসকন কেন্দ্রিক গীতা জয়ন্তী উৎসবে। ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর—টানা ছ’দিন ধরে চলা এই উৎসবে ইসকন সূত্রের দাবি, অন্তত তিন লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকের ঢল নেমেছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও বহু প্রতিনিধি পৌঁছেছেন মায়াপুরে।

আগেই অনলাইনে নথিভুক্ত হয়েছিলেন প্রায় দশ হাজার যুবক-যুবতী। তবে সবচেয়ে বড় বিস্ময় ‘হেঁটে-আসা’ ভিড়—যা ইসকনের আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গীতা যজ্ঞ, কীর্তন-ভজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব মিলিয়ে জায়গা পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। দর্শনার্থীরা সুযোগ পেয়েছেন এখনও নির্মীয়মাণ ‘টেম্পল অব দ্য ভেদিক প্ল্যানেটোরিয়াম’-এর ভিতরের অংশ ঘুরে দেখারও।

ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘গীতা জয়ন্তী এখন শুধুই ভারতের নয়, বহু দেশের উৎসব। আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ অনেক দেশ থেকেই প্রতিনিধি এসেছে। আগে রেজিস্ট্রেশন থাকলেও এবারের ভিড় আমাদের কল্পনারও বাইরে।’

এই পরিস্থিতিতে ব্রিগেড নিয়ে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই মুখ খুলেছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের বেলডাঙ্গা শাখার প্রধান স্বামী প্রদীপ্তানন্দ মহারাজ (কার্তিক মহারাজ)। তাঁর মন্তব্য—‘যাঁরা গীতা পাঠ নিয়ে রাজনৈতিক রং দেখছেন, তাঁদের গীতার দর্শন সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। গীতা চিরকাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছে।’ তাঁর কথায়, আধ্যাত্মিক অনুশীলনকে রাজনীতির সঙ্গে টেনে আনা ঠিক নয়।
শীত-ভ্রমণের মরসুমে সাধারণ পর্যটকদের ভিড়ও বেড়েছে মায়াপুরে। অনেকেই ভক্ত নন, তবু গীতা জয়ন্তীর আবহ তাঁদের টেনে এনেছে। উৎসবস্থল জুড়ে সেই মিলনমেলাই নজর কেড়েছে।

এখন রাজ্যের সব চোখ ফের ব্রিগেডের দিকে। ছ’দিন পরে সেখানে আসছেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ শাস্ত্রী, যোগ-প্রচারক বাবা রামদেব, বৃন্দাবনের স্বামী জ্ঞানানন্দ-সহ বহু আধ্যাত্মিক বক্তা। পাঁচ লক্ষ মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠে গীতা পাঠের অনুষ্ঠান রাজনীতির তরজা আরও বাড়াবে কি না—সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি।

Related posts

Leave a Comment