ভারত এক বহুসাংস্কৃতিক দেশ—যেখানে একই উৎসব উদ্যাপনের রয়েছে শত শত ভিন্ন রূপ। কিন্তু সম্প্রতি সেই বৈচিত্র্যকেই কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এক তীব্র বিতর্ক। দুর্গাপুজোর সময় দুই বাঙালি ইনফ্লুয়েন্সারের চিকেন রোল খাওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মতবিভাজন।
ঘটনাটি শুধু খাবার নিয়ে নয়—এটি ভারতের সাংস্কৃতিক পরিচয় ও পার্থক্যের প্রতিফলন। অনেক রাজ্যে নবরাত্রির সময় ভক্তরা দেবী দুর্গার উদ্দেশে উপবাস পালন করেন, নিরামিষ আহার গ্রহণ করেন। কিন্তু বাংলায় দুর্গাপুজো মানেই দেবী দুর্গার মায়ের বাড়ি ফেরা—উৎসব, আনন্দ আর মিলনমেলার আবহ। এখানে মাংসাহারকে দেখা হয় ঐতিহ্যেরই অংশ হিসেবে। পুজোর দিনে মাছ, মাংস বা ডিম খাওয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনই ঘরে অতিথি আপ্যায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ তা।
কলকাতার ইনফ্লুয়েন্সার হেমশ্রী ভদ্র ও সন্নতি মিত্র দুর্গাপুজোর দিনে শহরের পথে আনন্দ করতে করতে চিকেন রোল খাওয়ার ছবি পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। একাংশ তাঁদের ধর্মবিরোধী বলেও আখ্যা দেয়। কিন্তু বাঙালির এক বৃহৎ অংশের মতে, এটি ছিল তাদের সংস্কৃতির ওপর এক প্রকার আঘাত। কারণ, বাংলায় দুর্গাপুজোর সঙ্গে মাংসাহার যেমন স্বাভাবিক, তেমনই আনন্দের প্রতীক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের বাংলায়—যেখানে চিন্তার স্বাধীনতা, সহিষ্ণুতা ও যুক্তিবাদের চর্চা ছিল সভ্যতার অন্যতম ভিত্তি—সেখানে এই বিতর্ক নতুন প্রশ্ন তুলছে। কোনও উৎসবের আনন্দ কি অন্যের খাদ্যাভ্যাস দিয়ে মাপা যায়?
শেষ পর্যন্ত, এই বিতর্ক শুধু এক টুকরো চিকেন রোলের নয়। এটি সেই বৃহত্তর প্রশ্নের প্রতীক—ভারত কি তার আঞ্চলিক বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে সম্মান করবে, নাকি একক সংস্কৃতির মাপকাঠিতে সবাইকে বাঁধতে চাইবে?
দুর্গাপুজোর এই বিতর্ক তাই শুধু ধর্ম বা খাবারের সীমায় আটকে নেই—এটি ভারতের ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’-এর প্রকৃত মানে খুঁজে পাওয়ার লড়াই।

