মিলন খামারিয়া, শিলিগুড়ি, ৯ এপ্রিল: পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা ফসলের লাভকারী মূল্য পাচ্ছেন না। আলুর দাম না পেয়ে কৃষকরা বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করছেন। সরকারি রিপোর্ট বলছে, প্রায় সব ফসলের উৎপাদন খরচই ওঠে না তা বিক্রি করে। এই অবস্থা থেকে বের করার জন্য কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে সর্বভারতীয় কৃষক সংগঠন ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘ’। বর্তমানে এই সংগঠনের সারা ভারতে সদস্যের সংখ্যা ৪৩ লক্ষ, যা ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গেও ধীরে ধীরে বাড়ছে আর.এস.এস. প্রভাবিত এই সংগঠনের সদস্য।
এই সংগঠনের দু’দিনের প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে গেল শিলিগুড়ির ‘ঋষি ভবন’-এ। ভারতের পাঁচ রাজ্যের প্রান্ত তথা রাজ্য স্তরের প্রমুখ কার্যকর্তা উপস্থিত ছিলেন এই শিবিরে। পশ্চিমবঙ্গ ১৫, ওড়িশা ৯, মণিপুর ৫, অসম ৮, সিকিমের ৫ জন মিলিয়ে মোট ৪২ জন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন।
উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় সভাপতি – সাই রেড্ডি, সাধারণ সম্পাদক মোহিনী মোহন মিশ্র, সহ-সংগঠন সম্পাদক গজেন্দ্র সিং চৌহান, সম্পাদক ভানু থাপা, কোষাধ্যক্ষ যুগল কিশোর মিশ্র, কার্য কারিণী সদস্য কল্যাণ কুমার মন্ডল, এবং উত্তর ও উত্তর- পূর্বের সংগঠন সম্পাদক শ্রীনিবাস। পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন – সভাপতি অনিমেষ পাহাড়ি, সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার, সংগঠন মন্ত্রী অনিল রায়, কার্যালয় সচিব প্রসেনজিৎ নাথ, সম্পাদক কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস ও আরও অনেকে।
৮ই এপ্রিল শুরুতেই ভারতীয় কিষাণ সংঘের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ভারতমাতা, ভগবান বলরাম ও দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরির ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। তারপর আলোচনা শুরু হয়।
মোহিনী মোহন ‘গ্রাম সমিতি গঠন’ করার উপর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, গ্রাম সমিতি স্ব-শক্ত করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে গ্রাম সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। শক্তিশালী গ্রামই পারে কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন করতে। গ্রাম সমিতির প্রতিটি কার্যকর্তাকে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
যুগল কিশোর ‘ভারতীয় কিষাণ সংঘের কার্য পদ্ধতি ও ভারতীয় কিষাণ সংঘ’ পরিচয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘের কার্যকর্তারা প্রতিটি কৃষকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করবেন। তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানবেন এবং তার সমাধান কীভাবে ও কোথায় গেলে করা সম্ভব, সে-সব জানাবেন। তাতে সংগঠনের পরিচিত বাড়বে এবং কৃষকরা আমাদের সাথে জুড়ে যাবেন।
গজেন্দ্র সিং ‘সংগঠন’ নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে সংগঠন বাড়ানো যায়, তার জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত; কীভাবে সদস্য বাড়ানো যায় – এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এই শিবিরে সাই রেড্ডি ‘গ্রাম সমিতি ও সংস্থাপকের জীবনী’ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, গ্রাম সমিতিই হল আমাদের সংগঠনের মূল শক্তি। সেই শক্তি যত শক্তিশালী হবে ততই সংগঠন মজবুত হবে। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরি সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একজন অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৭০-এর দিকেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন – আজ সারা বিশ্বে কমিউনিজম দাপিয়ে বেরালেও কমিউনিজম একদিন এই দুর্বল হয়ে মুছে যাবে। আজ তাই হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে।
শ্রীনিবাস ‘পঞ্চ পরিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনে ভারতীয় কিষাণ সংঘের ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সামাজিক সমরসতা, কুটুম্ব প্রবোধন, পর্যাবরণ, স্বাভিমান ও স্বদেশী ভাবনা এবং নাগরিক কর্তব্য – এই পঞ্চ পরিবর্তন আমাদের করতে হবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ – এই দৃষ্টি নিয়ে কাজ করছে। সমাজের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করতে হবে। সবাইকে আত্মীয় ভাবতে হবে।পর্যাবরণ বজায় রাখতে প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষাকে করতে হবে।
নিজের দেশের দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা ও গর্ব করতে হবে। নাগরিক কর্তব্য পালন করতে হবে। এই দেশ ও দেশের প্রতিটি সম্পদ আমার ও তাকে রক্ষার দায়িত্বও আমার – এই ভাবনায় সমাজের মানুষকে জাগরিত করতে হবে। এই কাজের সাথে সমাজের প্রতিটি মানুষকে জুড়তে হবে। তাহলেই সমাজ পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি।
দু’দিনের এই শিবিরে রাজ্য বা প্রান্ত স্তরের প্রমুখ কার্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল,যাতে তারা পরে – জেলা, সমষ্টি ও গ্রামে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন কার্যকর্তাদের। কৃষকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করবেন তারা।
এই শিবিরের ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অনিল রায় ও কার্তিক চন্দ্র বিশ্বাস এবং সঞ্চালনায় ছিলেন আশিস সরকার। এই শিবিরে প্রমোদ নাথের লেখা ও জীবন রাণার অনুবাদ করা ‘মগর জনজাতি সমাজ অর সংস্কৃতি’ এবং ড. শরণ কুমার রিজাল ও ড. গণেশ দাসের লেখা ‘গোলমরিচ চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ’ – এর উপর বই দুটি প্রকাশ করা হয়।