27 C
Kolkata
November 1, 2025
দেশ

যুদ্ধরেখা টানা: উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন মতাদর্শের লড়াইয়ে রূপ নিল

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, যা ঘিরে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এনডিএ প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণন এবং বিরোধী শিবিরের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি—এই দুই প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি লড়াইকে এবার মতাদর্শের লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যজনিত কারণে উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় হঠাৎই পদত্যাগ করেন। তাঁর মেয়াদে তখনও দুই বছর বাকি ছিল। তবে নির্বাচিত প্রার্থী দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে পুরো পাঁচ বছরের জন্য উপ-রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।সি পি রাধাকৃষ্ণন, ৬৮ বছর বয়সি বিজেপি নেতা ও বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল। তিনি তামিলনাড়ুর বাসিন্দা এবং আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত।

২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি তামিলনাড়ুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন।অন্যদিকে, বি সুদর্শন রেড্ডি, ৭৯ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। তিনি ১৯৯৫ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে তিনি গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন এবং ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিনি গোয়ার প্রথম লোকায়ুক্ত হিসেবেও কাজ করেছেন।

এবারের লড়াইকে বলা হচ্ছে “সাউথ বনাম সাউথ”, কারণ রাধাকৃষ্ণন তামিলনাড়ুর আর রেড্ডি তেলেঙ্গানার।এনডিএ-র প্রার্থী নির্বাচনে তামিলনাড়ুর মুখ বেছে নেওয়ায় ডিএমকে-র জন্য বড় সংকট তৈরি হয়েছে। বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন দিলে কেন্দ্রবিরোধী অবস্থান দুর্বল হবে, আর সমর্থন না দিলে বিরোধীরা তা “তামিল গর্বকে অগ্রাহ্য” বলা শুরু করবে। অন্যদিকে, বিরোধীরা তেলুগুভাষী সুদর্শন রেড্ডিকে প্রার্থী করে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার ওয়াইএসআরসিপি এবং বিআরএস-কে চাপে ফেলেছে।

বিরোধীরা এই নির্বাচনী লড়াইকে স্পষ্টতই মতাদর্শের যুদ্ধ বলে বর্ণনা করছে। ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি বলেছেন, “এটি একটি মতাদর্শের লড়াই। আরএসএস-ঘনিষ্ঠ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা একত্রিত হয়েছে।” কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, বাম দল, তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি—সবাই রেড্ডির পাশে দাঁড়িয়েছে।ক্যাম্পেইনের সময় তীব্র অভিযোগ-প্রতিআরোপ শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিযোগ করেন, সুদর্শন রেড্ডি নকশালদের সমর্থন করেছেন, কারণ তিনি ২০১১ সালের নন্দিনী সুন্দর বনাম ছত্তিশগড় রাজ্য মামলায় সালওয়া জুডুম (মাওবাদ দমনে উপজাতি যুবকদের বিশেষ পুলিশ অফিসার হিসেবে নিয়োগ) অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন।অমিত শাহর মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন প্রাক্তন ১৮ জন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি। তাঁরা বলেন, ওই রায়কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তাঁদের বক্তব্য: “সালওয়া জুডুম রায় কোথাও নকশালপন্থী নয়। নির্বাচনী প্রচার মতাদর্শভিত্তিক হতেই পারে, তবে তা যেন শালীন ও মর্যাদাপূর্ণ হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় এমন আঘাত বিপজ্জনক।”উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী কলেজের মোট সদস্য সংখ্যা ৭৮২। বিজয়ী হতে হলে অন্তত ৩৯১ ভোট প্রয়োজন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরের হাতে রয়েছে প্রায় ৪২২ ভোট, ফলে সংখ্যার হিসেবে রাধাকৃষ্ণনের জয় প্রায় নিশ্চিত।

তবে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এই লড়াইকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।এই নির্বাচনের ফলেই ঠিক হবে ভারতের পরবর্তী উপ-রাষ্ট্রপতি, যিনি আগামী পাঁচ বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে থেকে রাজ্যসভার অধক্ষ্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন।

Related posts

Leave a Comment