শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অনুসারে, ওই কমিটি চাইছে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে এনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হোক। সংবিধান সংস্কার কমিটির মত, ক্ষমতায় ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তবে কী ভাবে এই ভারসাম্য আনা হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত বা আলোচনা শুরু হয়নি।
কমিশন দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর পক্ষপাতী। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি সর্বাধিক ১২০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু তার আগে প্রধানমন্ত্রীর থেকে স্বাক্ষর নিতে হয়। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগকে নিয়ে একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সেই সুপারিশ অনুসারে পরবর্তীকালে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই যাতে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা কমাতে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কোনও দলের প্রধান এবং সংসদীয় দলের নেতা হতে পারবেন না বলেও সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন মনে করছে এ ক্ষেত্রে কমানো যাবে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের জেরে গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা দখল করে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তারপর থেকেই উত্তাল পরিস্থিতির সম্মুখীন বাংলাদেশ। দেশের পরিস্থিতির দিকে নজর না দিলেও ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার উঠে পড়ে লেগেছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে নানান রাজনৈতিক দল। বর্তমানে দেশের সংবিধান সস্কার কমিটি যে সংস্কারের দিকে এগোতে চাইছে তাতে সেই সমস্ত অভিযোগেই একপ্রকার সিলমোহর পড়লো বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
জানা গিয়েছে, বিএনপি-সহ বাংলাদেশের অন্য সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিও ক্ষমতার ভারসাম্যের বিষয়ে সহমত। বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশগুলির বিষয়ে আগামী মাসে রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে আলোচনায় বসতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। কোন পথে ভারসাম্য আনা হবে, তা নিয়ে ওই বৈঠক থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে নিয়ম রয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের প্রধান বিচারপতির নিয়োগ ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই কাজ করতে হয় সেখানকার রাষ্ট্রপতিকে। এ ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। কিছু সাংবিধানিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়াই যাতে রাষ্ট্রপতি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সে প্রস্তাবও রেখেছে কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, তারা চাইছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে আনতে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলি রিয়াজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য সংবিধানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। রাষ্ট্রপতির হাতে কী কী দায়িত্ব থাকবে, সে বিষয়ে কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তিনি।
previous post