কলকাতা, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ — ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় আজ শেষ হয়ে গেল। বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষ্ণ দেওল ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত। ছ’দশকেরও বেশি সময় তিনি শুধু পর্দার নায়ক ছিলেন না—শক্তি, সরলতা, মাধুর্য আর আবেগের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার উপস্থিতি দর্শকদের হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে, আবার মুগ্ধও করেছে। পাঞ্জাবের এক ছোট গ্রাম থেকে বম্বের ঝলমলে স্টুডিয়ো—ধর্মেন্দ্রর উত্থান বলিউড ইতিহাসের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প।
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের নসরালিতে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। বাবা কেওয়াল কৃষ্ণ ছিলেন স্কুল মাস্টার, মা সতওয়ন্ত কৌর ছিলেন ঐতিহ্য ও পরিশ্রমে বিশ্বাসী পরিবারের স্তম্ভ। সাহনেওয়াল ও লুধিয়ানায় তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে শিক্ষার কঠোরতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের পরিবেশে।
মুম্বইয়ে পা রাখার বহু আগেই ১৯ বছর বয়সে প্রয়াত অভিনেতা বিয়ে করেন প্রাকাশ কৌরকে। তাদের চার সন্তান—সানি, ববি, ভিজেতা ও অজীতা। পরবর্তীতে অভিনয়জগতে প্রবেশের পর তিনি বলিউডের ‘ড্রিমগার্ল’ হেমা মালিনীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির দুই মেয়ে—ঈশা ও অহনা।
১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক। এরপর ‘আই মিলন কি বেলা’, ‘ফুল অউর পাথর’, ‘হকীকত’—একের পর এক ছবি তাকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তরের দশক—ধর্মেন্দ্রর সুপারস্টার হয়ে ওঠার সময়। ‘আঁখে’র থ্রিলার স্পিরিট থেকে ‘সীতা অউর গীতা’র রোম্যান্টিক ঝলক—সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন দর্শকের প্রিয়।
সত্তরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বভারতীয় সুপারস্টার। ‘শোলে’, ‘জীবন মৃত্যু’, ‘জুগনু’, ‘প্রতিজ্ঞা’—এই তালিকা বলিউড ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। ‘শোলে’ তো হয়ে ওঠে ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ।
তার ক্যারিয়ারে রেকর্ডের ছড়াছড়ি—১৯৭৩ সালে এক বছরে আটটি হিট, ১৯৮৭ সালে সাতটি টানা সফল ছবি, জীবনে ৩০০-রও বেশি চলচ্চিত্র। যুগের সেরা নায়ক-নায়িকা ও পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করে গেছেন তিনি।
নব্বইয়ের দশকে চরিত্রাভিনয়ে হালকা পালট আসে—‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যা’, ‘লাইফ ইন এ… মেট্রো’, ‘জনি গদ্দার’-এর মতো ছবিতে তার অভিনয়ের নতুন মাত্রা দেখা যায়। ২০২৩ সালে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-তে প্রত্যাবর্তন করে তিনি প্রমাণ করেন যে প্রজন্মের সীমা ভেদ করে তার আবির্ভাব আজও সমান উজ্জ্বল।
অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও সফল ধর্মেন্দ্র। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বিজেতা ফিল্মসই লঞ্চ করে সানি ও ববি দেওলকে। রাজনৈতিক জীবনেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল—২০০৪ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বিকানের লোকসভা আসনে এমপি।
দিলীপ কুমার, অমিতাভ ও জয়া বচ্চন, সালমান খান, জিনাত আমান—সকলেই তার অপরূপ উপস্থিতি ও ব্যক্তিত্বের কথা বলতেন। তিনি ছিলেন সময়ের অন্যতম সুদর্শন নায়ক।
আজ তার প্রয়াণে বলিউডে নেমেছে গভীর শোক। ধর্মেন্দ্রর রোম্যান্টিক স্বপ্ন থেকে অ্যাকশন-ছক ভাঙা ব্লকবাস্টার—১৯৬০-এর দশক থেকে সাম্প্রতিক চরিত্রাভিনয় পর্যন্ত ভারতীয় সিনেমার বহু রূপকে তিনি প্রাণ দিয়েছেন। তার সংলাপ, তার হাসি, তার দীপ্তি—চলচ্চিত্রজগতের ইতিহাসে চিরদিনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।
তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
