December 6, 2025
Featured

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশতবর্ষোত্তর জন্মবার্ষিকী পালিত হল

পারুল খামারিয়ার প্রতিবেদন, কলকাতা, ২ নভেম্বর; গতকাল কলকাতার রবীন্দ্র সদনের নন্দন চত্ত্বরে, ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাডেমি সভাঘর-এ, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পালন করা হয় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশতবর্ষোত্তম জন্মবার্ষিকী। এটি ছিল তাদের সারা বছর ব্যাপী(নভেম্বর’২৪- ডিসেম্বর’২৫) আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পঞ্চম উৎসব।এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন ট্রাস্টের সম্পাদক শক্তিময় দাস, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বামী সুপর্ণানন্দজী মহারাজ(সাধারণ সম্পাদক,রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক), অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন ড.ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় (প্রাক্তন উপাচার্য, সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি), বিশেষ অতিথি ছিলেন নাগাথিহল্লি রমেশ(কর্নাটক)বিশিষ্ট কবি ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাতা।

ড. দীপা দাসের নেতৃত্বে, সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর রচনার মাধ্যমে যে নবজাগরণের বার্তা দিয়েছেন তা আদতে হিন্দুত্বের নবজাগরণ। তিনি অল্প বয়সে ধর্ম পরিবর্তন করে যে ভুল করেছিলেন তার প্রায়শ্চিত্ত হয়তো নিজের কবরে, নিজের হাতে লেখা কবিতায় ‘মাইকেল’ না লিখে ‘শ্রী’ লিখে করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে প্রকৃত খ্রিস্টান বলা যায় কিনা তা নিয়ে খ্রিস্টান ধর্মের লোকেরা অনেক মন্তব্য করেছেন কিন্তু তার কাব্যকে সমাদরে বিশ্ববাসী গ্রহণ করেছেন। তাঁকে ভুলিয়ে দেবার সাধ্য কারো নেই। তাই আমরা দু’শো বছর পরও কবির জন্মদিনকে আজ শ্রদ্ধায় এখানে স্মরণ করছি।নাগাথিহল্লি রমেশ বলেন, শক্তিময় বাবুর এই উদ্যোগ ভীষণ প্রশংসনীয়। এক সময় কলকাতা ছিল সংস্কৃতির রাজধানী।

কিন্তু আজ তার বিপর্যয় ঘটছে। অনাচারের পরিমাণ বাড়ছে। এখানে আর. জি. কর হাসপাতালে ডাক্তার হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে। কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের করার জন্য যারা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা করছেন তার মধ্যে অন্যতম জাতীয় সাহিত্য প্রকাশন ট্রাস্ট। আজকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দ্বিশতবর্ষোত্তম জন্মবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে কবিকে ও তাঁর রচনাকে আমরা শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য এখানে সবাই উপস্থিত হয়েছি।ড. ধ্রুবজ্যোতি বলেন, রামায়ণ কাহিনিকে তিনি নতুন ভাবে দেখেছেন ও তাঁর মেঘনাদ বধ কাব্যের মধ্যে তা প্রকাশ করেছেন। শেখপুরা মসজিদের বিদ্বান ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে মধুসূদন বাল্যকালে বাংলা, ফারসি ও আরবি শিক্ষা করেন। ফরাসি লেখা পাঠ করার জন্য তাঁর লেখার মধ্যে ফরাসি সাহিত্যে ছাপ আজীবন প্রকাশিত হয়েছে।স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ বলেন, সে যুগে স্বামীজি কিন্তু মাইকেল মধুসূদন দত্তকে চিনেছিলেন। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তাঁর শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে।

‘ছুছুন্দরী বধ বাক্য’ অর্থাৎ ইঁদুর মারার কাব্য লিখে ব্যঙ্গ করার জন্য স্বামীজি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।আজকের এই অনুষ্ঠানের কবি সম্মেলনে কবিতা পাঠ করেন – জয়দেব চক্রবর্তী, কেশব রঞ্জন দে, সুনীল করণ, সাকিল আহমেদ, রাজীব শ্রাবণ, বাচ্চু হালদার, গীতা রাহা হালদার, ড. জারিনা জারিন ও আরও অনেকে।অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন পরিবেশন করেন – অর্পিতা ঘোষ মিত্র, দীপান্বিতা বসু সরকার, অসীমা ভড়, মৌমিতা ঘোষ, শুভ শেঠ, রবিণ মুখোপাধ্যায়, পাপিয়া মিত্র, অমরেশ মুখার্জি ও আরও অনেকে।সঙ্গীত পরিবেশন করেন ছন্দা হালদার, সৌগত অধিকারী, ড. বনানী দে, শুভেন্দু দাস, হিমাদ্রী মুখোপাধ্যায়, মৌলি মুখার্জি, ড. রুবেল পাল, রীণা রায় ও প্রসেনজিৎ মণ্ডলের নেতৃত্বে ‘রানাঘাট কথামালা’।অনুশীলনের সঞ্চালনায় ছিলেন বরুণ চক্রবর্তী, দীপশিখা চক্রবর্তী, মল্লিকা রায় ও ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর সম্পাদক মিলন খামারিয়া।

Related posts

Leave a Comment