সংবাদ কলকাতা: গত ২৩ আগস্ট চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3)-র ল্যান্ডার বিক্রম (Lander Vikram)। সেখানে নামার কয়েক ঘন্টা পর কাজ শুরু করে দেয় ল্যান্ডার। বিক্রমের পেট থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান (Rover Pragyan)। এরপর তারা দুজনে মিলে চন্দ্রপৃষ্ঠে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে। বর্তমানে তারা চাঁদের মাটিতে স্লিপ মোডে রয়েছে। ফের ১৪ দিন পর সেখানে দিনের আলো ফুটলেই তারা কাজ শুরু করে দেবে বলে আশা করছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO)-র বিজ্ঞানীরা। যদিও এই ১৪ দিনে তারা যেসব মূল্যবান তথ্য পাঠিয়েছে, তাতে ইসরোর মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এই স্বল্প সময়ে তাদের দেওয়া তথ্য মহাকাশ গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ফের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় জেগে ওঠার আশায় রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। আবার তাদের বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে চারটি আবিষ্কার রীতিমতো ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। সেই চারটি তথ্য কী কী?
জানা গিয়েছে, ১) বিক্রমের মধ্যে থাকা একটি পেলোড চাঁদের তাপমাত্রা ও আয়োনোস্ফিয়ারের ঘনত্ব পরিমাপ করেছে। পাশাপাশি, চন্দ্রপৃষ্ঠকে ঘিরে থাকা বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত যে ১০০ কিলোমিটার প্লাজমার পুরু আস্তরণ রয়েছে, সেটিতে আয়ন ও ইলেকট্রনের মিশ্রণের সন্ধান মিলেছে। যা খুবই বিরল। এই প্লাজমার প্রতি ঘন মিটারে প্রায় ৫ মিলিয়ন থেকে ৩০ মিলিয়ন ইলেকট্রনের ঘনত্ব নির্দেশ করছে। এক্ষেত্রে চাঁদে দিনের সময় এই ঘনত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তুলনায় পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই ঘনত্ব প্রতি ঘন মিটারে এক মিলিয়ন। ফলে ভবিষ্যতে চাঁদে যদি মানুষ বসবাস করে, তাহলে এই আয়োনোস্ফিয়ারের ঘনত্ব কাজে লাগবে। এমনটাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ্য, আয়োনোস্ফিয়ারে ইলেকট্রনের ঘনত্ব যত বেশি হবে, রেডিও সংকেত যেতে তত বাধা প্রাপ্ত হবে। অন্যদিকে ঘনত্ব কম হলে রেডিও সংকেত অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে।
২) চাঁদে তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে বেশি রহস্যজনক। কেননা চাঁদের ওপরে ২ সেন্টিমিটার নিচের স্তরের তাপমাত্রা আর ৮ সেন্টিমিটার নিচের তাপমাত্রার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। প্রায় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও চাঁদে দিনে ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। জানা গিয়েছে, দিনে যেখানে তাপমাত্রা ১২০° ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাতে সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১৩০° ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার মেরু এলাকায় রাতে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায় বলে জানা গিয়েছে।
৩) আবার চন্দ্রযান-৩ মিশনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হল খনিজ পদার্থের গবেষণা। সেই গবেষণায় বড় সাফল্য হল চাঁদের মাটিতে সালফারের উপস্থিতি। যা একটি গলিত শিলার উপাদান। এক্ষেত্রে গবেষকরা মনে করছেন, জন্ম লগ্নে চাঁদ গলিত শিলার একটি পুরু আস্তরণ দিয়ে আবৃত ছিল। এই সালফারের উপস্থিতি গ্রহাণু থেকে হতে পারে। ধীরে ধীরে চন্দ্রপৃষ্ঠের সেই সালফার ঠান্ডা হয়ে জমে যায়। এছাড়া অন্যান্য খনিজ উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, ক্যালসিয়াম ও লোহা।
৪) চাঁদে ভূমিকম্পের অস্তিত্বও রেকর্ড করেছে ল্যান্ডার বিক্রম। জানা গিয়েছে, গত ২৬ আগস্ট এমন ঘটনা ঘটে। সেই কম্পন রেকর্ড করে পৃথিবীতে পাঠায় বিক্রম। বিক্রমে রয়েছে একটি লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি পেলোড। সেই পেলোড চন্দ্রপৃষ্ঠে গত ২৬ আগস্টে সৃষ্ট ভূমিকম্পের রেকর্ড করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। সেই ভূমিকম্পের যে রেকর্ড পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে, তা প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্ট বলে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা। প্রসঙ্গত চাঁদের মাটিতে যে ভূমিকম্প হয় তা আগেও জানা গিয়েছিল। কিন্তু এবার ভূমিকম্পের যে ধরনের রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে, তা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কিছু তথ্য দিচ্ছে। যা নিয়ে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট ধন্ধে রয়েছেন। ইতিমধ্যে চাঁদে ভূমিকম্পের প্রকৃত কারণ নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন।
previous post