April 15, 2025
কলকাতা

সাপে কাটা শিশুকে কলার ভেলায় করে মুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিল পরিবার

কাকদ্বীপ, ২৪ আগস্ট: একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে আকাশ ছোঁয়া । চাঁদে, মঙ্গলে পাড়ি দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ৷ টিভি খুললেই ডিজিটালাইজেশনের বিজ্ঞাপন। হাতের স্মার্টফোনে গোটা দুনিয়া মুঠোর মধ্যে। শুধু শহর নয়, মফস্বল ছাড়িয়ে আজ গ্রামবাংলার ঘরে ঘরেও পৌঁছে গিয়েছে স্মার্টফোন। অথচ সাপে কাটা রোগীর দেহে প্রাণ ফেরাতে মা মনসার কৃপার উপর ভরসা এখনও চোখে পড়ে। যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কুসংস্কার এখনও ছেড়ে যায়নি এই একবিংশ শতাব্দীতেও। আজও সাপে কাটা মৃতদেহে প্রাণ ফিরে পেতে ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় পরিবারের লোকজন। যেন মনসা মঙ্গল কাব্যের ছায়া এই শতকেও। ফুল দিয়ে সাজানো কলার ভেলা। তাতে শুয়ে আছে ছোট্ট শিশুর নিথর দেহ। নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে।

জানা গিয়েছে, সাপের কামড়ে মৃত ওই শিশুর দেহ সৎকার না করে প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে নদীর জলে। এমনই ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ বিধানসভার হারুড পয়েন্ট উপকূল থানার অন্তর্গত স্বামী বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রসাদপুরে। প্রসাদপুরের বাসিন্দা লক্ষণ দাসের বছর পাঁচেকের ছেলে তুষার দাস মঙ্গলবার বাড়ির উঠোনে খেলা করছিল। সেই সময় হঠাৎ তাকে একটি বিষাক্ত সাপ ছোবল দেয়। বিষের জ্বালায় তখন ছটফট করতে থাকে তুষার। পরিবারের লোকজনেরা তড়িঘড়ি তাকে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু হলেও শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট তুষার। এরপর মৃত ছেলের দেহে প্রাণ ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে মনসামঙ্গল কাব্যের পৌরাণিক কাহিনীর মত সুসজ্জিত কলার ভেলায় দেহ চাপিয়ে মুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসিয়ে দেয় ওই পরিবার। বুধবার নদীতে ওই ভেলা দেখতে পান গ্রামবাসীরা। এরপর তারাই খবর দেন থানাতে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ওই ভেলা ও মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কাকদ্বীপ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আধুনিক যুগেও এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার মানুষের মন থেকে যে কুসংস্কার যায়নি, তারই জ্বলন্ত প্রমাণ এই ঘটনা। এখনও পর্যন্ত গ্রাম বাংলার মানুষের বিশ্বাস সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে কলার ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দিলে সেই দেহে প্রাণ ফিরিয়ে দেন মা মনসা। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এই পুরান কাব্যের ছায়ায় রীতিমত হইচই পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকায়। এই বিষয়ে মৃত তুষারের কাকা বিভীষণ দাস বলেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছিল তুষারের। তার দেহে প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় কলার ভেলায় করে মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় মুড়িগঙ্গা নদীতে। এটা অবশ্যই একটি কুসংস্কার। কিন্তু মৃত বাচ্ছাকে ফিরে পেতে শেষমেশ কিছু করার ছিলনা। অনেক আশা নিয়ে মনসা মায়ের উপর ভরসা করে সেই কুসংস্কারের আশ্রয় নিতে হয়েছিল আমাদের ।

Related posts

Leave a Comment