শঙ্কর মণ্ডল: গণতন্ত্রের অসুস্থতা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত। কলম দিয়ে প্রতিবাদ সর্বকালের সেরা অস্ত্র বলে মনে করি। তবে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ বা আন্দোলন করাকে আমি চিরকালই সমর্থন করেছি। সেজন্য যথাসম্ভব অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই অসুস্থ, তাতে নেতারা তো বটেই, রাজনৈতিক কর্মীরাও আক্রান্ত। আর তাই এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার এতটুকু স্বস্তি নেই। বলতে বাধা নেই, এই রকম মানসিকতা নিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও এই অসুস্থ গণতন্ত্র কখনও সুস্থ হতে পারবে না। গত ৪ঠা মে-র কর্মসূচীর পর মানসিক ও শারীরিকভাবে একেবারেই আহত হয়ে পড়ি।
যাই হোক, আজ কর্ণাটকের নির্বাচনের ফল বের হবে। যে কেউ জয়ী হবে এবং সরকারও গড়বে। কিন্তু একটা কথা মানতেই হবে, সেটা হল ঐ রাজ্যের গণতন্ত্র কিন্তু সুস্থ। বিনা রক্তপাতে নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। যা আমাদের রাজ্যের কোনও মানুষ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তো বটেই, এমনকি যখন আমি রাজনীতি শুরু করিনি, একেবারেই ছোট ছিলাম, মানে স্কুলে পড়তাম, তখনও ছাপ্পা ভোট কাকে বলে তা জেনে গিয়েছিলাম। আজ আদালত ছাড়া গণতন্ত্রের ন্যূনতম নিদর্শনকেও বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু সব মানুষের পক্ষে তো আর আদালতে যাওয়া সম্ভব নয়।
কারণ, আদালতে যেতে গেলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব।এই রাজ্যের সরকার ক্রমশ একের পর এক যে পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, তা আগামী দিনে বাংলার অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলবে। চাকরি চুরি থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পের টাকা চুরি, আজ প্রকাশ্যে এমনভাবে এসেছে, তাতে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাসে, ট্রেনে সর্বত্রই মানুষ তৃণমূলকে দেখলেই বলছে চোর! চোর! চোর! সিভিক পুলিশ দিয়ে শুরু করেছিল, এখন সর্বত্র সিভিক নিয়োগ করতে করতে, অবশেষে এখন সিভিক ডাক্তার তৈরির পরিকল্পনাও করে ফেলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রকৃত প্রতিবাদী চরিত্রের বড়ই অভাব।
রাজনৈতিক আন্দোলন প্রচলিত পদ্ধতিতেই হচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রেও টাকা দিয়ে লোক আনতে হচ্ছে। যা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ এই রাজ্যই একমাত্র রাজ্য ছিল, যেখানে প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মীর জন্ম হত। আজ সবটাই অতীত। আর তথাকথিত বুদ্ধিজিবীরা অদ্ভূতভাবে নীরব। বিশেষ করে নৃশংস হত্যা থেকে শুরু করে, কেরালা স্টোরির মত একটা সিনেমাকে বিনা যুক্তিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও এদের মুখে কোনও প্রতিবাদ নেই। সবই যেন এক মায়ার সংসার। তাই পরিশেষে বলতেই হয়, নীল আকাশের নীচে পৃথিবী আর পৃথিবীর পরে ঐ নীল আকাশ, তুমি দেখেছো কি?
previous post